ফরাসি সাহিত্যের বাঙালি পরিগ্রহণ: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪৫-১৯২৫) Réception bengali de la littérature française : Jyotirindranath Thakur (1849-1925) Bengali Reception of the French Literature: Jyotirindranath Thakur (1849-1925)

ফরাসি সাহিত্যের বাঙালি পরিগ্রহণ: জ্যোতিরিন্দ্র নাথ ঠাকুর

 

Réception bengali De la littérature fraçaise : jyotirindranath thakur (1849-1925)

 

COVER 1 A


ফরাসি সাহিত্যের বাঙালি পরিগ্রহণ:

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর  (১৮৪৫১৯২৫)

প্রথম অংশ

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ষষ্ঠ সন্তান, পঞ্চম পুত্র। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জন্ম ১৮৪৯ সালে, রবীন্দ্রনাথ তাঁর ছোট ভাইদের একজন তিনি বয়সে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের চেয়ে বারো বছরের ছোট। ১৯২৫ সালে ছিয়াত্তর বছর বয়সে রাঁচিতে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ মারা যান।

রবীন্দ্রনাথ তথা ঠাকুরবাড়ি প্রসঙ্গে আলোচনায় বারবার জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নাম করা হয়, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের কবিপ্রতিভার পরিপোষক, ভারতী পত্রিকার প্রকাশের প্রধান উদ্যোক্তা, জোড়াসাঁকো নাট্যশালা স্থাপন তথা ঠাকুরবাড়ির বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উদ্যোগের উত্সাহী সংগঠক হিসেবে তাঁর নাম করা হলেও তাঁর জীবন বা রচনা সম্পর্কে সাধারণভাবে একটা নীরবতা পালন করা হয়। ১৯৬৩ সালে কবি সুশীল রায় গবেষণা হিসেবে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনীগ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থেও তিনি জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবন বা তাঁর সম্পর্কে নীরবতা সম্পর্কে সে অর্থে কোনো বিস্তৃত আলোচনা না করে যথারীতি ঠাকুরবাড়ির সাংস্কৃতিক পরিবেশ নিয়ে অনেকটা আলোচনা করেছেন। এই বইয়ের ভূমিকায় সুকুমার সেন লিখেছেন তাঁর জীবন সম্বন্ধে আরো অনেক জানতে ইচ্ছে করে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথকে আমার কেমন tragic figure বলে মনে হয়। এই বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত, তবে তিনি যে বইয়ের ভূমিকায় একথা লিখেছেন সে বইটিতেও পূর্বোল্লিখিত নীরবতা পালন করা হয়েছে। এছাড়া বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথের মুখ থেকে শোনা তাঁর জীবনস্মৃতি ১৩২১ বঙ্গাব্দের বৈশাখ থেকে চৈত্র মাস (১৯১৪ সালের এপ্রিল থেকে ১৯১৫ সালের মার্চএপ্রিল) পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ভারতী পত্রিকায় আর তারপর ১৯২০ সালে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি বই আকারে প্রকাশ করেন। তারপর সে বইও বহুকাল অপ্রাপ্য হয়ে যায়। ১৯৭৯ সালে ‘প্রজ্ঞাভারতী’ প্রকাশনী তা পুনর্মুদ্রিত করে মন্মথনাথ ঘোষ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ নামে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের একটি জীবনীগ্রন্থরচনা করেন (১৯২৬)

পিতার ইচ্ছানুসারে ১৮৬৮ সালে আঠারো বছর বয়সী জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সঙ্গে কাদম্বরী গঙ্গোপাধ্যায়ের বিয়ে হয়। রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন সাত বছর। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বয়স যখন পঁয়ত্রিশ কাদম্বরী দেবী হঠাৎ আত্মহত্যা করেন (১৯ এপ্রিল, ১৯৮৪) এই ঘটনার পর থেকেই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নিসঃঙ্গতা আর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ সম্পর্কে চারপাশের নীরবতার শুরু। কিন্তু কেন ? সবাই এ প্রশ্ন এড়িয়ে অন্য কোনো প্রসঙ্গে চলে যান। রবীন্দ্রনাথের ঐ সময়ের বিভিন্ন রচনা আর পারিপার্শ্বিক ঘটনা থেকে বোঝা যায় কাদম্বরী দেবী ও রবীন্দ্রনাথের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কাদম্বরী দেবী যখন আত্মহত্যা করেন তখন রবীন্দ্রনাথের বয়স তেইশ বছর । তার আগের বছর পিতার ইচ্ছানুসারে রবীন্দ্রনাথ এগারো বছরের মৃণালিনী দেবীকে বিয়ে করেন। কাদম্বরী দেবী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের চেয়ে দুবছরের বড়। রবীন্দ্রনাথের বিয়ে বা/এবং অন্য কী কারণে কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেন তা কখনোই প্রকাশিত হয় নি। তাছাড়া চূড়ান্ত রক্ষণশীল পিতৃশাসিত ঠাকুরপরিবার কাদম্বরীর সমস্ত চিঠিপত্র পুড়িয়ে ফেলে আর পয়সার জোরে পুলিশ, আদালত ইত্যাদিকে নিষ্ক্রিয় করে দ্রুত কাদম্বরীর মৃতদেহের সকার করে ঐ ইতিহাসে দাঁড়ি টেনে দেয়। এর পর ক্রমশ বিখ্যাত হয়ে ওঠা রবীন্দ্রনাথকে ঘেরা ঠাকুরবাড়িতে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ বিচ্ছিন্ন আর নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। রবীন্দ্রজীবনীকার তথা রবীন্দ্রসাহিত্যের ব্যাখ্যাকাররা রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কাদম্বরী দেবীর সম্পর্ক যেমন কাব্যিক ব্যাখ্যার বেশি কিছু করেন না আর কাদম্বরী দেবীর আত্মহত্যার পর জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক সম্বন্ধ নীরব থাকেন। আমরা জানিনা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের tragic figure হওয়ার ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকাটা কী কিন্তু আমরা দেখতে পাই ১৯২৫ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকলেও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কখনো শান্তিনিকেতনে আমন্ত্রিত হন নি । দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় ফরাসি দার্শনিক ভিক্তর ক্যুজাঁ(Victor Cousin, ১৭৯২১৮৬৭) রচনা দ্যু ভ্রে, দ্যু বো, দ্যু বিয়াঁ (Du Vrai, du Beau et du Bien, ১৮৫৩), অনুবাদ সত্য, সুন্দর, মঙ্গল ছাড়া জ্যোতিরিন্দ্রনাথের আর কোনো রচনা বিশ্বভারতী প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয় নি। কবি সুশীল রায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ওপর ডক্টরেট করেন। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর কয়েক দশক পরে তিনি যখন বিশ্বভারতী গ্রন্থণা বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন তখন তাঁর সম্পাদনায় বিশ্বভারতী গ্রন্থণা বিভাগে থেকে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের নাট্যসংগ্রহ প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে তাঁর মৌলিক নাটক ছাড়া আর কিছুই নেই। স্ত্রীর আত্মহত্যার পর তাঁর মৌলিক লেখা প্রায় থেমে যায় । তার পর জীবনের শেষ অব্দি অক্লান্তভাবে তিনি যা করেছেন তা হল অনুবাদ: সংস্কৃত থেকে, ফরাসি থেকে, মারাঠি থেকে, ইংরেজি থেকে প্রচুর অনুবাদ। এসব অনুবাদের বড় অংশ কখনোই সংগৃহীত হয়নি, ছড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের যেসব অনুবাদ তাঁর জীবকালে একবার বই হিসেবে ছাপা হয় তা শেষ হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার আর কখনো ছাপা না হওয়ায় অপ্রাপ্য হয়ে যায় বসুমতী সাহিত্যমন্দির বেশ কিছু বই আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রচনা নিয়ে পাঁচ খণ্ডে জ্যোতিরিন্দ্রনাথরচনাবলি প্রকাশ করে (কম দাম আর আর এমন এক ধরনের সস্তা নিউজপ্রিন্ট কাগজে ছাপা যা কয়েক বছরের মধ্যে হলুদ থেকে লাল হয়ে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে সবকিছুর অমোঘ নশ্বরতা প্রমাণ করে)। অবশ্য ঐ রচনাবলিও এখন আর পাওয়া যায় না। আর ঐ রচনাবলির বাইরেও ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় হদিশহীন জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অসংখ্য অনূদিত রচনা।

১৯১০ সালে রাঁচির মোরাবাদ পাহাড়ের ওপর শান্তিধাম নামে বাড়ি তৈরি করিয়ে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ প্রায় ১৫ বছর আত্মনির্বাসিত জীবন কাটান। এখানেই নিঃসঙ্গ জ্যোতিরিন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর জ্যোতিরিন্দ্রনাথের শান্তিধাম বিহারি কর্মচারিদের তত্ত্বাবধানে থাকে, তাঁর গ্রন্থসংগ্রহ, অপ্রকাশিত রচনা বা পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা হয়নি অর্থা কোনো ব্যবস্থা কেউ করেনি। শোনা যায়, বিহারি কর্মচারিরা বই আর কাগজপত্র জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে । তাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের যেসব রচনার অনুবাদ, বিশেষত ফরাসি রচনার অনুবাদ খুঁজে ঘটনাক্রমে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলেও তার উস রচনা, কোন বই বা সাহিত্যপত্রিকা থেকে তা নেওয়া, এমন কী কোনো কোনো ক্ষেত্রে লেখকের নাম কী তাও নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না।

এখানে নাট্যকার, প্রবন্ধকার, সংজ্ঞীতজ্ঞ, রেখাচিত্রকার, সাহিত্যঅনুবাদক জ্যোতিরিন্দ্রনাথের অনুবাদকর্মের বিশেষ একটা অংশই শুধু এখানে আমাদের আলোচ্য, এই খণ্ডিত বিশেষ অংশটি হল জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ফরাসি সাহিত্যের অনুবাদ ।

প্রথমেই বলা দরকার জ্যোতিরিন্দ্রনাথ যেসব ফরাসি রচনার অনুবাদ করেছেন, তা প্রত্যক্ষ অনুবাদ, অর্থাৎ ফরাসি রচনার ইংরিজি বা (অন্য কোনো ভাষার) অনুলিখনের অনুলিখন নয়, ফরাসি ভাষার প্ররচনা বা উত্সরচনার অনুলিখনে সৃষ্ট বাংলা অনুরচনা । ফলত এই অনুরচনা তৃতীয় কোনো অনুরচয়িতার পঠনলিখন, তৃতীয় কোনো ভাষাসংবিধির সাহিত্যরীতি তথা সাহিত্যের ইতিহাস, আর তৃতীয় কোনো অনুলিখনের রচনাপদ্ধতির মধ্যস্থতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। এখানে প্রশ্ন হল ফরাসি যেহেতু এদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় পাঠ্যতালিকার অন্তর্গত নয় অতএব জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কখন কোথায় ফরাসি শিখেছিলেন। এ ব্যাপারে ইতিপূর্বে উল্লিখিত বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায় ও মন্মথনাথ ঘোষের বইয়ের সামান্য কিছু পংক্তি ছাড়া আর কোনো বিবরণ আমাদের চোখে পড়ে নি।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ যখন হিন্দু কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র :

এই সময়ে শ্রীযুক্ত সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয় সিভিলিয়ান হইয়া এবং শ্রীযুক্ত মনোমোহন ঘোষ ব্যরিষ্টারী পাশ করিয়া আসিয়া, কাশীপুর বাগানবাড়ীতে অবস্থান করিতেছিলেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথও আসিয়া, এই খানে ইঁহাদের সঙ্গে মিলিত হইলেন।পরীক্ষার পড়া ছাড়িয়া তিনি মিষ্টার ঘোষের নিকট ফরাসী ভাষা শিক্ষা আরম্ভ করিয়া দিলেন।ফরাসী ভাষায় জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রথম শিক্ষারম্ভ হইল, এই কাশীপুর উদ্যানবাটিকায়। মনোমোহন ঘোষ মহাশয় প্রথমেই ভল্টেয়ার কৃত সীজার (César) নাটক তাঁহাকে পড়াইতে আরম্ভ করিলেন। তিনি বলিলেন, তাহার প্রথম চরণের একটু অংশ এখনও তাঁহার কর্ণে যেন অহরহ ধ্বনিত হইতেছে:—

César tu va régner সীজার তু ভা রেঙিয়ে; অর্থাৎ —সীজার তুমি রাজত্ব করিতে যাইতেছ — ইত্যাদি।

বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়: জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি, কলকাতা, শিশির পাবলিশিং হাউস, ১৯২০.,পৃ.৮৭।

১৮৬৩ খৃষ্টাব্দেসত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ইল্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পর বত্সর তিনি ভারতবর্ষে প্রত্যাগমন করেনতাঁহার বাল্যবন্ধু মনোমোহন ঘোষব্যারিষ্টার হইয়া ১৮৬৬ খৃষ্টাব্দের শেষভাগে এদেশে প্রত্যাবর্ত্তন করেন। কলিকাতার উপকণ্ঠে কাশীপুরে এক উদ্যানবাটিকায় তিনি প্রথমে অবস্থান করেন। সত্যেন্দ্রনাথ কিছুদিনের জন্য সস্ত্রীক কলিকাতারয় আসিয়া তাঁহার সহিত বাস করেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথও তাঁহাদিগের সহিত মিলিত হইলেন। তিনি এফ্এ পরীক্ষা প্রদানের ইচ্ছা পরিত্যগ করিয়া মনোমোহনের নিকট ফরাসী ভাষা শিক্ষা করিতে আরম্ভ করিলেন

মন্মথনাথ ঘোষ: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, কলকাতা, আদি ব্রাহ্ম সমাজ, ১৯২৭, পৃ. পৃ. ৯।

তিনি [জ্যোতিরিন্দ্রনাথ] তখন আহম্ণদাবাদে সত্যেন্দ্রনাথের নিকট। গণেন্দ্রনাথকে লিখিত সত্যেন্দ্রনাথের নিম্নোদ্ধৃত ইংরাজি পত্রাংশের অনুবাদ পাঠে প্রতীত হয় যে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তখন ফরাসীভাষা, চিত্রাংকনবিদ্যা ও সেতার বাদন শিক্ষা করিতেছিলেন:—

১১৬৭— জ্যোতি আমার নিকট ফরাসীভাষা শিক্ষা আরম্ভ করিয়াছে।

৬৭— আমি তাহাকে ফরাসী শিখাই তেছি। সে খুব খাটিতেছে ।

মন্মথনাথ ঘোষ: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, কলকাতা, আদি ব্রাহ্ম সমাজ, ১৯২৭, পৃ. ২০২১।

এই সময়ে [১৮৬৮ সাল নাগাদ] কাথ্রাঁ ( Cathrin ) নামে একজন ফরাসী হেমেন্দ্রনাথের নিকট চাকরীর জন্য আসিয়াছিল। হেমেন্দ্রবাবু তাহাকে ত্রিশটাকা বেতনে পাচক নিযুক্ত করিলেন সর্ত্ত হইল, সে পাকও করিবে, ফরাসী ভাষাও পড়াইবে। একবার হেমেন্দ্রনাথ সপরিবারে বোলপুরে গিয়াছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথও তাঁহাদের সঙ্গে ছিলেন। সে আমাদের সঙ্গে ফরাসীতেই কথা বলিত, ফরাসীতেই গল্প করিত। তাহার কারণ, সে ফরাসী ভিন্ন আর কোনও ভাযাই জানিত না।অনেক দিন পর্য্যন্ত সে আমাদের নিকট ছিল, তারপর একবার ছুটি লইয়া বাড়ী যায়। সেখান হইতে সে নিয়মিত পত্রাদিও লিখিত; কিন্তু ফরাসীজার্ম্মান্ (Franco-German) যুদ্ধ বাধার পর হইতে তাহার কোনো খবর পাওয়া যায় নাই।

বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়: জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি, কলকাতা, শিশির পাবলিশিং হাউস, ১৯২০.,পৃ.১৩২১৩৫।,

বাঙালির ফরাসি সাহিত্যের পরিগ্রহণের ইতিহাসে প্রথমেই যে দুটি নাম মনে পড়ে তা হল তরু দত্ত (১৮৫৬১৮৭৭) আর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর মধ্যে তরুর পরিগ্রহণের প্রকাশ ইংরেজি ভাষায়, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ক্ষেত্রে এই ভাষা বাংলা। এদিক থেকে বাঙালির ফরাসি সাহিত্যের পরিগ্রহণের ইতিহাসে দুজনের ভূমিকা সম্পূর্ণ ভিন্ন। খুব সহজভাবে বলা যায়, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ফরাসি সাহিত্যের পরিগ্রহণের ফলশ্রুতি বাংলা ভাষায় আনুরাচনিক সৃষ্টি বাঙালির সংস্কৃতির আন্তঃসাংস্কৃতিকতার পরিধি প্রসারিত করে আর তারই সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের অন্তর্গত হয়ে বাংলা ভাষার সাহিত্যের আন্তঃসাংস্কৃতিক আন্তঃরাচনিকতায় আত্তীকৃত হয়, এর পাশাপাশি বাঙালি তরুর ফরাসি সাহিত্যের পরিগ্রহণ তথা তার ফলশ্রুতি ইংরেজি ভাষায় আনুরাচনিক সৃষ্টি (A Sheaf Gleaned from the French Fields, Calcutta, 1st edition, 1776, 2nd edition, 1778, London, 3rd edition,1880) বাঙালির সংস্কৃতির আন্তঃসাংস্কৃতিকতার পরিধি প্রসারিত করলেও বাংলা ভাষার সাহিত্যের সঙ্গে তার কোনো প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই।

বহুকাল ধরে অপ্রাপ্য বলে ফরাসি থেকে অনূদিত জ্যোতিরিন্দ্রনাথের রচনা আজকের বাংলা ভাষার পাঠকের অচেনা। তাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ফরাসি থেকে অনুবাদের অনুবাদতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ বা মূল্যায়ন না করে এখানে আমাদের উদ্দেশ্য হল :

. ) জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ফরাসি থেকে অনূদিত রচনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় সহ একটা অসমাপ্ত তালিকা বা পঞ্জি রচনা, অসমাপ্ত’, কেননা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ফরাসি থেকে অনূদিত বহু রচনা হদিশ ছাড়া ভাবে আজো ছড়িয়ে রয়েছে পুরনো দিনের পত্রপত্রিকায়।

) বাংলায় অনূদিত রচনার পঞ্জি তৈরির আরেকটি অসুবিধে হল বাংলা ভাষায় অনুবাদে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উত্সরচনার নাম নির্দেশ করা হয় না, আবার অনেক সময় সামাজিকসাংস্কৃতিক কারণে শিরোনামও পালটানো হয়; এছাড়া বাংলায় প্রতিবর্ণীকরণের কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম না থাকায় উত্সরচনার রচয়িতার প্রকৃত নামও অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। যেমন ভিক্তর য়ুগোর একটি কবিতার শিরোনাম Quia pulvis es (ক্যথলিক খ্রিস্টানদের ইস্টারের আগের চল্লিশ দিনের লেন্টের শুরুর অ্যাশ ওয়েডনেসডের খ্রিস্টপর্বে পাদ্রি ল্যাটিন বাইবেলএর আদিপুস্তকের (.১৯) বাক্যাংশকে ব্যবহার করে বলেন, Memento homo quia pulvis es et in pulverem reverteris স্মরণ করো মানুষ, যেহেতু তুমি ধূলি আর ধূলিতেই তুমি ফিরে যাবে)। কবিতাটির দুটি বাংলা অনুবাদ রয়েছে: একটি অনুবাদ রবীন্দ্রনাথের যার শিরোনাম ‘জীবন মরণ’, দ্বিতীয় অনুবাদটি জ্যোতিরিন্দ্রনাথের, শিরোনাম ‘আসলে জীবিত’ ; দুটি অনুবাদেই মূল কবিতার কোনো নির্দেশ না থাকায় উত্সরচনা খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়ে । মোপাসঁ(Maupassant) অলংকার’ (La Parure) বলে একটা গল্প রয়েছে, বাংলায় তার অনুবাদের নাম ‘কণ্ঠমালা’ (ভারতী, বৈশাখ, ১৩০২/এপ্রিল ১৮৯৫, অনুবাদকের নাম নেই), নেকলেস (শীতাংসু মৈত্র: মোপাসাঁ থেকে, ১৯৪৬), হীরের হার’ (বিমল দত্ত: মোপাসাঁ পঞ্চবিংশতি, তারিখহীন; রুণ চক্রবর্তী, গীতা গুহ রায়: মোপাসাঁর সেরা প্রেমের গল্প, ১৯৭৮), প্ররচনার কোনো নাম না থাকায় খুঁজে খুঁজে শেষ পর্যন্ত বোঝা যায় যে অনুরচনার শিরোনামের সূত্র হল ইংরেজি অনুরচনার শিরোনামThe Necklaceবা The Diamond Necklace

.আজকের বাংলা ভাষার পাঠকের* কাছে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ফরাসি থেকে অনূদিত রচনার প্রাথমিক পরিচয় দেওয়ার জন্য আমরা তাঁর পুস্তকাকারে প্রকাশিত অনূদিত গল্পকবিতার সংকলন ‘ফরাসীপ্রসূন’ (১৯০৪) আর তার সঙ্গে ‘আরো কিছু অনুবাদ’ অংশে ‘বসুমতী সাহিত্যমন্দির’ প্রকাশিত ‘ জ্যোতিরিন্দ্রনাথগ্রন্থাবলীতে’ সাময়িক প ত্র থেকে সংকলিত ফরাসি থেকে অনূদিত কয়েকটি গল্প এবং এর বাইরে ছড়িয়ে থাকা আরো কিছু ফরাসি থেকে অনূদিত গল্পকবিতা উপস্থাপিত করেছি।

(dasgupta2812@gmail.com)

পুষ্কর দাশগুপ্ত আমার ভাট বকা

পুষ্কর দাশগুপ্ত: আমার ভাট বকা

AMAR BHAT BAKA

. আতাকেলানে আমি

দিশি আর বিলিতি সাহিবসুবো আর বড়বাবুদের পা চেটে, এখানে ওখানে তেল মাখিয়ে আখের গুছনোর খেমতা আমার কখনো ছিল না, হয়নি, নেই, হবে না। তাই চালচুলো বলতে আমার কিছুই হল না, বুঝতেই পারছ বস, আমার ইহকাল পরকাল চিরকাল ঝজ্ঝরে।

ছিলাম গুলজার নগর কলকাতায়! কলকাতা, আফিঙের ব্যওসা আর চোরাই চালানের জন্য শ্রী শ্রী শ্রীযুত কোম্পানী বাহাদুরের তৈরি বাঙালির প্রাণের শহর কলকাতা, যা নর্দমার সন্ত মা টেরিজার কেরেস্তান প্রেমের আমাশয়ে আজ গোটা দুনিয়ায় নর্দমার শহর বলে হেভি নাম ফাটিয়েছে । গুলজার নগর কলকাতা!

মন্ত্রী, পুলিস, ব্যওসাদার,

ওরাই হুকুম ওরাই হাকিম ওরাই মালিক কলকাতার,

পাড়ায় পাড়ায় ওদের চামচে মাস্তান আর নেতা

শাসন চালায়, শোষণ চালায়, ওরাই চালায় কলকাতা।

শহর জুড়ে পট্টিবাজি ধাপ্পাবাজি দুনম্বরির রাজ,

জমজমাটি করে খাচ্ছে ফেঁপে উঠছে তাব ফেরেব্বাজ ।

চৌরঙ্গিতে নেংটি পরা জাতির বাপকে সেলাম ঠুকবে হাজারবার

ভড়ংবাজি ভাঁওতাবাজি তাব বাজির উনিই গুরু উনিই আসল আড়তদার।।

আমি স্লা উদগান্ডু, তার মানে গান্ডুর গান্ডু, আমাকে যে বোকা বললে অদ্ধেক বলা হয় তা আমি জেনে গেছি! মন্ত্রী, নেতা, পুলিস , মাস্তান, বড় আমলা কারো সঙ্গে কখনো আমি দোস্তি পাতাতে পারিনি । দুচাট্টে চালাকচতুর ছোকরা বুঝিয়েছিল আজকের দুনিয়ায় নাকি আঁতাত আর সমঝোতা ছাড়া চলে না, ওগুলোকে নাকি বলে স্ট্র্যাটেজি, আমার মাথায় ষাঁড়ের গোবর শুঁকিয়ে ঘুঁটে হচ্ছে, তাই কিছুই ইনসাইডে ঢোকেনি। দালাল, বাড়িআলা, পাড়ার দাদা, পার্টির হবু লিডার, ফোতো মাস্তান, বাপের ক্যাপফাটা সব ছেলে, সবার ধাতানি খেয়ে খেয়ে শেষমেশ কলকাতা ছাড়লাম।

যে শহরের পাড়ায় পাড়ায় অলিতে গলিতে টো টো কোম্পানির ম্যানেজারি করতে করতে আমি লায়েক হয়েছি, আর লায়েক হওয়ার আগেই কিমলিস দাদাদের মিছিলে মাথামুন্ডু কিছু না বুঝেই এ আজাদি ঝুটা হ্যায় ভুলো মা ভুলো মাৎ বলে চেঁচিয়েছি, যেখানে রকবাজ গুহ্যপক্ক বখা ছেলেদের সঙ্গে ছকুখানসামা লেনের রকে পোঁদ ঘসতে ঘসতে আড্ডা মেরেছি, গোলদিঘির বেঞ্চিতে বসে গুলতানি করতে করতে ঘুগনি খেয়েছি, শ্রদ্ধানন্দ পার্কে নেতাদের নরম গরম বক্তিমে শুনেছি, মির্জাপুর স্ট্রিটে একটা হাতেগরম আলুর চপ শেষ করে বিড়িতে সুখটান দিতে না দিতেই ছোট মাসির ভাসুর মশায়কে দেখে সটকে পটুয়াটোলার গলিতে ঢুকে পড়েছি….

কলকাতার ছিষ্টি, গুড়ে নেই মিষ্টি। চারদিকেই ঠগ, কলকাতার ঢপ।।

সেই গুলজার নগর কলকাতা ছেড়ে এখন আমি কপালের ঘোরে বছরের পর বছর ধরে দিন গুজরান করছি সেই গোরাদের অথবা বলা যায় তুবাব বা ম্জুংগুদের দেশেযে গোরা, তুবাব বা ম্জুংগুরা ভাবে যে গোটা পৃথিবীটা হল ওদের মৌরসী আমবাগান

. নকশালপন্থীগণ

গত শতাব্দীর সপ্তমঅষ্টম দশকে মহ সাম্যবাদী বিপ্লবের বাচন, ভাষণ এবং তর্জনগর্জন সহ এক দল যুবাপরুষ অতর্কিতে রঙ্গভূমিতে প্রবিষ্ট হইয়া হারেরেরে হুংকার, আস্ফালন ও হম্বিতম্বিতে জনতাকে তটস্থ করিয়া তুলিল, পরবর্তীকালে উল্লিখিত বিপ্লববাদীরা নকশালপন্থী অভিধা লাভ করিয়া খ্যাত হইল । উক্ত নকশালপন্থীদিগের দিবাস্বপ্ন ছিল অস্মদ্দিগের গুলজার নগরীতে সর্বহারা লোচ্চাদিগের বিপ্লবের বীজমন্ত্রে দীক্ষাদান করিয়া তাহাদিগের সহায়তায় মহানগরী কলিকাতা তথা সমগ্র দেশ পরিপ্লাবিত করিয়া বিপ্লবের ইয়াংসিকিয়াংপ্রবাহ লইয়া আসিবেন এবং আধুনিক ভগীরথের ভূমিকা গ্রহণ করতঃ ঐ জলপ্রবাহের পবিত্র প্লাবনে অস্মিন দেশের অধিবাবাসীদিগকে যুগযুগান্তের দুরাত্মা দুঃশাসন সামন্ততান্ত্রিকধনতান্ত্রিক দুর্ভাগ্য ও শোষণের অভিশাপ হইতে চিরতরে মুক্ত করিবেন। কিন্তু বহ্বারম্বে লঘুক্রিয়া! ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ ইত্যকার বিপ্লবের আহ্বানমন্ত্রের কলকোলাহলই সার হইল ! বিপ্নব আর আসিল না, প্রবল গর্জনেই সকল আয়োজন সমাপিত হইল, বর্ষণ আর ঘটিল না। প্রকৃত প্রস্তাবে অস্মিন দেশের আর্দ্র জলবায়ুতে নকশালপন্থী অভিধার নকশালের ” বহুকালপূর্বেই কীটদষ্ট হইয়া বিলুপ্ত হইবার কারণে উক্ত বিপ্লবীদিগের বৃহদাংশ ইতোমধ্যে নকশাপন্থীতে পরিণত হইয়াছিল। অগ্রপশ্চা, বর্তমান, ভবিষ্যৎ, কার্যকারণ, হেতু এবং পরিণাম বিষয়ে বিবেচনাবিবর্জিত উক্ত নকশাপন্থীদিগের খোয়াবের ফুট্টুসের মৌতাতের অবকাশে যবনিকার অন্তরাল হইতে বিপদাশঙ্কায় ঐক্যবদ্ধ অদৃশ্য স্বদেশীয় ও বৈদেশিক ক্ষমতাবান রক্ষাকর্তাদিগের প্রয়াস, প্রযত্ন ও কূট পরিকল্পনা অনুযায়ী বিপ্লববাদীবাহিনীর প্রবাহে প্রভূত সংখ্যক খোচর লোচ্চার বেনোজল প্রবিষ্ট হইল। অলক্ষ্য চালকদিগের সূত্রের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত উক্ত দালাল লোচ্চাবাহিনীর সহায়তায় দেশের প্রকৃত প্রভুরা একদা জাতীয়তাবাদের এবং তত্পরে রাজনৈতিক বামপন্থার বীজক্ষেত্র বাংলামাধ্যম শিক্ষায়তনগুলি ধ্বংস করিয়া দিলেন। অল্পবিদ্য, স্বল্পবুদ্ধি, অজ্ঞানতিমিরান্ধ আমরা পরম দুঃখ ও চরম বেদনার সঙ্গে স্বীকার করিতে বাধ্য হইতেছি যে বিপ্লবের বিগতনিদ্র মশালচি উক্ত নকশালপন্থীদিগের প্রভূত নকশার অভিপ্রায়, উদ্দেশ্য, বিধেয়, কর্তা, কর্ম ইত্যাদি কদাপি অস্মদ্দিগের মস্তিষ্কে প্রবেশ করে নাই। কিন্তু যস্মদদিগের আখাঙ্ক্ষা, পরিকল্পনা, যুক্তি, সিদ্ধান্ত, কর্মকাণ্ড অস্মদ্দিগের বিচারে বকাণ্ডপ্রত্যাশান্যায় নামক হেত্বাভাসের অথবা অগ্রে শকট স্থাপন করতঃ তাহার পশ্চাতে অশ্ব যোজনার ন্যায় কাণ্ডজ্ঞানহীনতার দৃষ্টান্ত ব্যতীত অপর কিছু বলিয়া বোধ হয় নাই। অহো ! অবশেষে সার্ধ্ব শত বত্সরের ব্যবধানে বিশ্রুতকীর্তি ধর্মপ্রাণ ধর্মাবতার ধর্মপ্রবর্তক দুষ্টনিবারক শিষ্টপ্রজাপালক সদ্বিবেচক সদ্বিচারক শ্রী শ্রী শ্রীযুত কোম্পানি বাহাদুরের শিক্ষাদীক্ষাবতার ত্রিকালদর্শী মেকলের দেশীয় জারজনির্মিতির পরিকল্পনার পরিপূর্ণ বাস্তব রূপায়ণ ও শ্রীবৃদ্ধি ঘটিল। এতদ্ব্যতীত ইহাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে ভূতপূর্ব বিপ্লবীদিগের একটি অংশ কালক্রমে ভেক এবং ভোল পরিবর্তন করতঃ মেকলের জারজগোষ্ঠীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করিয়াছে।

. মেকলের জারজদিগের বৃত্তান্ত

টমাস ব্যাবিংটন মেকলে উবাচ:

আইদার স্যানস্কৃট অথবা অ্যারাবিক এ দুদুটো ল্যাঙ্গুয়েজের কোনোটার বিষয়েই আমার কোনো নলেজ নেই। বাট ওগুলোর ভ্যালুর কারেক্ট এস্টিমেট করার জন্য হোয়াট আই ক্যান ডু সে সমস্তই আই হেভ ডান। আমি মোস্ট সেলিব্রেটেড অ্যারাবিক এবং স্যানস্কৃট ওয়ার্কসসমূহের ট্রান্সলেশন পাঠ করিয়াছি। এদেশে এবং হোমে ইস্টার্ন ল্যঙ্গুয়েজগুলোতে প্রফিসিয়েন্সির কারণে ডিস্টিংগুইশড ম্যানদের সঙ্গে ডিসকাস করেছি। ওরিয়েন্টালিস্টদের নিজস্ব ভ্যাল্যুয়েশন মেনে নিয়ে  ওরিয়েন্টাল লার্নিংকে টেক করার জন্য আমি কোয়াইট রেডি  বাট এমাঙ্গ দেম এমন একজনেরও আমি খোঁজ পাই নি যিনি একথা ডিনাই করতে পারেন যে কোনো একটা গুড ইয়োরোপিয়ান লাইব্রেরির সিঙ্গল একখানা শেল্ফের মূল্যই ইন্ডিয়া অ্যান্ড অ্যারাবিয়ার হোল নেটিভ লিটরেচারের সমতুল্য

স্যানস্কৃট লিটরেচার আমাদের স্যাক্সন আর নর্মান অ্যনসেস্টরদের লিটরেচার যতটা ভ্যালুয়েবেল্ ঠিক ততটা ভ্যালুয়েবেল্ও হবে কিনা সে বিষয়ে আমার ডাউট রয়েছে

ওয়েস্ট ইয়োরোপের ল্যঙ্গুয়েজগুলো রাশিয়াকে সিভিলাইজড করেছে। ওসমস্ত ল্যঙ্গুয়েজ তাতারদের যা করেছে হিন্দুদেরও তাই করবে, এবিষয়ে আমি ডাউট করতে পারি না

অ্যাট প্রেজেন্ট এমন একটা ক্লাস ফর্ম করার জন্য উই মাস্ট ডু আউয়ার বেস্ট যারা বিটুইন আস আর আমরা যে মিলিয়ন্স্ অব মানুষকে গভার্ন করি তাদের মধ্যে ইন্টারপ্রেটার হতে পারবে, এমন একটা ক্লাস অব পার্সন্স যারা ব্লাড আর গায়ের রঙে ইন্ডিয়ান, বাট টেস্ট, ওপিনিয়ন্স্, মরাল্স্ অ্যান্ড ইনটেলেক্টে ইংলিশ।

টমাস ব্যাবিংটন মেকলে: ইন্ডিয়ান এডুকেশনের মাইন্যুট ,

সেকেন্ড ফেব্রুয়ারি ১৮৩৫

[I have no knowledge of either Sanscrit or Arabic. But I have done what I could to form a correct estimate of their value. I have read translations of the most celebrated Arabic and Sanscrit works. I have conversed, both here and at home, with men distinguished by their proficiency in the Eastern tongues. I am quite ready to take the oriental learning at the valuation of the orientalists themselves. I have never found one among them who could deny that a single shelf of a good European library was worth the whole native literature of India and Arabia….

I doubt whether the Sanscrit literature be as valuable as that of our Saxon and Norman progenitors…

The languages of western Europe civilised Russia. I cannot doubt that they will do for the Hindoo what they have done the Tartar…

We must at present do our best to form a class who may be interpreters between us and the millions whom we govern,  –a class of persons Indian in blood and colour, but English in tastes, in opinions, in morals and in intellect.

Thomas Babington Macaulay: Minutes on Indian Education, 2nd February, 1835]

উইনস্টন লেনাড স্পেন্সারচার্চিল উবাচ:

আমি ইন্ডিয়ানদের হেট করি। ওরা হল একটা বিস্টলি পিপল, ওদের ধর্মও হল গিয়ে একটা বিস্টলি রিলিজান।

লেও আমেরির দিনলিপি, ১৯২৯১৯৪৫, জন বার্নস ও ডেভিড নিকলসন সম্পাদিত, মার্চ ১৯৮৭, পৃষ্ঠা ৮৩২।

[I hate Indians. They are a beastly people with a beastly religion’ Leo Amery Diaries, 1929-1945 , edited by John Barnes and David Nicholson, March, 1987, p. 832.]

ফিউচারের এম্পাইয়ার্স হইল এম্পাইয়ার্স অব মাইন্ড উইনস্টন চার্চিল, হার্ভাড ইউনিভার্সিটি, ১৯৪৩।

[The empires of the future are the empires of the mind. Winston Churchill, Harvard University, 1943.]

উপর্যুক্ত উদ্ধৃত অলোকসামান্য বাণীর প্রথমটি ভারতীয়দিগকে ঔপনিবেশিক শাসন ও ইংরেজি শিক্ষার দ্বারা সভ্যতার আলোকে উদ্ভাসিত করিবারে বদ্ধপরিকর ভারতান্তপ্রাণ, ভারতবিদ্যামহার্ণব মহাজ্ঞানী মহদাশয় মহামহিম মহাপ্রভাব মহামানব মহাপ্রাণ মহাপুরুষ মহাত্মা ত্রিকালদর্শী মেকলের।

দ্বিতীয় বাণীটি সত্যব্রত মহদাশয় মহানুভব মহাভাগ ভারতান্তপ্রাণ পঞ্চাশের মন্বন্তর সৃষ্টির মাধ্যমে তিরিশ লক্ষ ভারতবাসীকে যমপুরী স্পেসালের তৃতীয় শ্রেণীতে গাদাগাদি ঠাসাঠাসি করিয়া সরাসরি স্বর্গলোকে প্রেরণের ব্যবস্থাপক ইয়াংকিদিগের তত্ত্বাবধানে ভাষাসাস্কৃতিক মানসিক সাম্রাজ্য অর্থাৎ নয়াউপনিবেশ স্থাপনের পরিকল্পক মেকলের জারজগণের পুষ্পাঞ্জলিতে অর্চিতচরণ পূজার্হ চার্চিলের (চার চিলের {শকুনের?} সমাহার)

ভারতীয়রুধিরময়ে জগদপগতপাপম্।

স্নপয়সি পয়সি শমিতভবতাপম্।

কেশবধৃত ইংরাজরূপ , জয় জগদীশ হরে।।

ইংরাজ পরিচয়ে অভিহিত শ্বেতদ্বীপাগত ধবলাঙ্গেরা দ্বিশত বত্সর যাবৎ ভারতবর্ষীয়দিগের মস্তকে কণ্টকীফল ভাঙিতেছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর হঠাৎ তাহারা বাক্সপ্যাটেরা সহ বিদায়ের নাটক করিল। প্রকৃত প্রস্তাবে ইংরাজগণ আপাতদৃষ্টভাবে তস্মদদিগের গোশালার দুগ্ধবতী গাভী এই উপমহাদেশ পরিত্যাগ করিয়া তাহাদিগের ইদানীন্তন প্রভু ইয়াংকিদের সহিত সঙ্গবদ্ধ হইয়া মেকলের জারজদিগকে এতদ্দেশের মঞ্চের কাষ্ঠাসনে বসাইয়া দিয়া যবনিকার অন্তরালে আরাম কেদারায় আসন গ্রহণ করিল। শ্বেতাঙ্গরা বিদায়ের নাটকের ভাঁওতার পর ঐ অন্তরাল হইতে সূত্র টানিয়া অঘোষিত অথচ তাহাদের বশংবদ দেওয়ান মুত্সুদ্দি মুহুরি বাজারসরকার ও দালাল পদে অধিষ্ঠিত মেকলের জারজদিগের মাধ্যমে জম্বুদ্বীপের অন্তর্গত এই দেশের শাসন ও শোষণ অব্যাহত রাখিল। অদ্যাবধি তাহার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন তো দূরের কথা তাহা আরো অধিক হইতে অধিকতর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত তথা গভীরতর ভাবে প্রোথিতমূল হইল। বস্তুত এই অচিন্তিতপূর্ব কৌশলে পূর্বতন ঔপনিবেশিকতা আধুনিক নবঔপনিবেশিকতায় রূপান্তরিত হইল এবং মেকলের উপমহাদেশীয় জারজগণ মহামহিমার্ণব প্রচণ্ড অখণ্ড দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ইংলণ্ডেশ্বরীও ততোধিক প্রতাপান্বিত ইয়াংকীশ্বরের বিনীত বিশ্বস্ত বিগলিত বশংবদ ভৃত্যের পদাধিকার লাভ করিয়া কৃতার্থ হইল।

অতঃপর এতদ্দেশীয় মেকলের জারজদিগের বিশেষ একটি গোষ্ঠীর সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু বলা আমাদের অবশ্যকর্তব্য। নবঔপনিবেশিকতার ভিত্তি সুদৃঢ় তথা চিরস্থায়ী করিবার মহৎ প্রয়োজনে মহাত্মা মেকলের উপমহাদেশীয় জারজদিগের মধ্যে প্রভুভক্তির পরিমাণ অনুযায়ী নির্বাচিত কিছু ভারতবর্ষীয়দিগের সমবায়ে এই গোষ্ঠী সংগঠিত । প্রকল্পনা অনুসারে এই বিশেষ গোষ্ঠীর প্রধান কর্তব্য হইল ভারতীয় উপমহাদেশে নবঔপনিবেশিকতার সমর্থন ও পরিপোষণ করা। এই কর্তব্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হইল মধ্যবিত্তনিম্নমধ্যবিত্তদিগকে গণতন্ত্রের ঢপের চপ এবং সংখ্যাগুরু অগণিত বিত্তহীনদিগকে অপক্ক কদলী ও দগ্ধ কচু পরিবেশন। এই বিশেষ গোষ্ঠীকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্ব দেওয়ার পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইয়াছে। তদনুযায়ী ঢক্কানিনাদ ও প্রচুর ধূপধুনা সহ যশ খ্যাতি কীর্তি প্রতিষ্ঠা তথা প্রতিপত্তি দ্বারা এই গোষ্ঠীকে অলংকৃত করা হইয়াছে। উক্ত দুইটি দলের পরিচয় নিম্নরূপ:

প্রথম গ্যাঙ: গ্রামশি দেরিদা লাকঁ ফুকো দল্যুজ হাবেরমাস ফানোঁ মেমনি সাইদ ইত্যাদি পাশ্চাত্যদেশীয় পণ্ডিতদিগের গুরু মারা চেলা জ্ঞানার্ণব মেকলের জারজ বুদ্ধিজীবিদিগের দ্বারা সংগঠিত।

দ্বিতীয় গ্যাঙ: এই গ্যাঙে রহিয়াছেন সাহিত্যপ্রমিক মেকলের জারজ শ্বেতাঙ্গমনোরঞ্জক ইন্ডিয়ান কথা, কহানি এবং কেচ্ছা রচয়িতা লেখকলেখিকা সম্প্রদায়।

পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশ্বায়িত প্রথম গ্যাঙের মহানায়কগণ স্বদেশ বিদেশ পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ ঈশান বায়ু অগ্নি নৈর্ঋত ঊর্ধ্ব অধঃ আখ্যাত বিভিন্ন দিকের সুপ্রসিদ্ধ শ্রুতকীর্তি অসংখ্য মহাবিদ্যায়তনের ডিগ্রি ডিপ্লোমা উপাধি মানপত্র পদক পুরস্কার সম্মান পদাধিকারের মহামূল্যবান মৌলিমালা দ্বারা সমলংকৃত খ্যাতি প্রতিপত্তি ক্ষমতা প্রতিভা এবং জ্ঞানের আব্রহ্মস্তম্ভব্যাপিনী বিশালতা এবং অতলান্ত গভীরতা দ্বারা সমৃদ্ধ ডলার ও জ্ঞানের তপশ্চর্যায় ক্ষমতাবান পুণ্যবান গুণবান ধনবান বিদ্যাবান সমুচ্চবর্গীয় কতিপয় বাঙালি/ভারতীয় । শৌর্য বীর্য ধৈর্য স্থৈর্য গাম্ভীর্য ঔদার্য এবং ঐশ্বর্যের আকর কেবলমাত্র ইয়াংকিপ্রতীচ্যের রাষ্ট্রনীতি (গণতন্ত্রের মহৎ আদর্শের প্রেরণা তাড়না উদরাময় শিরঃপীড়া ও গর্ভযণ্ত্রণায় ইরাক আক্রমণ, ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর আদর্শবাদী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, দুরাচার কাদাফিকে পশুবৎ হত্যা, ওয়াহাবি আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষক, ধর্মপ্রাণ সৌদি আরবের সমাদর, মুশার বংশধর ইজরাএলএর দুশ গণতান্ত্রিক আণবিক বোমা সম্পর্কে নীরবতা ইত্যাদির) সম্পর্কে মূক এবং বধির হইলেও ইঁহারা জীবলোকের মহান কল্যাণকামনায় একই সঙ্গে লক্ষ্মী ও সরস্বতীর মুখপদ্মনিসৃত ভাষা ইংরাজিতে পোস্ট উপসর্গ যুক্ত বিভিন্ন মতবাদের (পোস্টকলোনিয়াল, পোস্টমর্ডান, পোস্টস্ট্রাকচারালিস্ট, পোস্টকম্যুনিস্ট, পোস্টক্যাপিটালিস্ট, পোস্টফেমিনিস্ট, পোস্টইম্পিরিয়াল, পোস্টফ্রয়েডিয়ান, পোস্টগ্রামশিয়ান ইত্যাদি) মার্কা শোভিত গোএষণা প্রসূত যেসব গ্রন্থ রচনা করেন তা শ্বেতাঙ্গরা তেলেভাজা থুড়ি বিগম্যাকএর মতো গলাধঃকরণের ভঙ্গি করে আর উক্ত জ্ঞানতপস্বীদের ব্যাংকে অতিসারের বেগে বিদেশি মুদ্রা আসিতে থাকে। ইঁহাদিগের মধ্যে কেউ কেউ নাকি আধুনিকতম পদ্ধতিতে বৃহদ্ধর্মপুরাণের বেণরাজার উপাখ্যনের বিভিন্ন উপাদানের বিচূর্ণনবিশ্লেষণের ভিত্তিতে তথা রূপান্তরমমূলক সঞ্জননপদ্ধতির অনুসরণে এবং জরথ্রুশথাবতার অগ্নিহোত্রী এক মহর্ষির দীর্ঘ অনুধ্যান তথা নিবিড় উপলব্ধির অনুপ্রেরণায় পোস্টপোস্টইম্পিরিয়ালিস্ট পোস্টপোস্টপোস্টস্ট্রাকচারালিস্ট পোস্টপোস্টপোস্টপোস্টমার্ক্সিস্ট পদ্ধতিতে রাজা বেণ প্রবর্তিত জাতিসাংকর্যের আদর্শে এবং ছকে ভাষাসাংকর্য, সংস্কৃতিসাংকর্য, চিন্তাসাংকর্য ও অনুকৃতির মর্কটবৃত্তির পোস্টপোস্টপোস্টকলোনিয়াল, পোস্টপোস্টপোস্টমর্ডান অনিবার্যতার কথা বলেন। ইঁহাদিগের কেহ কেহ আবার কাঁচা বয়সে বামাচারী নকশা()পন্থীও ছিলেন, কিন্তু ডলারের কৃপায় তেন হি দিবসৌ গতাঃ, ঐ যে বলে ডলারে নেভায় সকল জ্বালা, আপন বাপে ডাকে শালা। এতদ্ব্যতীত ইঁহাদিগের একজন ..লস্য ..ল হরিদাস পালের গুপ্ত জীবনকাহিনি এবং অন্য একজন নাকি “পোঁদে নাই ইন্দি ভজরে গোবিন্দি” এবং “মারের শেষ জুতোর বাড়ি , চাকরির শেষ চৌকিদারি” শীর্ষক উনবিংশ শতাব্দীর এই তিনখানি অনন্যসাধারণ, সর্বরহস্যোদ্ঘাটক, সর্বকৌতূহলনিবারক সোনাগাজির গলির মৌখিক নিম্নবর্গীয় ইতিহাসের ভিত্তিতে উত্পাদিত শৃঙ্গারাদি নব রসের মিশ্রিত জারকে সিক্ত রচনার নিম্নবর্গীয় বাচনের সংকেততাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ভারত উপমহাদেশের ইয়াংকিমনোরঞ্জক অভূতপূর্ব ইতিহাস রচনা করিয়া শ্বেতাঙ্গ পণ্ডিতদিগকে চমত্কৃত করিয়াছেন

মেকলের জারজদিগের মধ্যে খ্যাতিমান কীর্তিমান ধনবান গুণবান এই দুই শ্রেণী মাতৃভাষাকে শূকরীবিষ্ঠাবৎ বর্জন করিয়া মেকলের ভাষা ইংরাজিকে পিতৃভাষা জ্ঞানে গ্রহণ করিয়াছেন, বিলাইত দেশে আমড়া হয় বলিয়া আমরা শুনি নাই, কিন্তু এদেশে বিলাতি আমড়া হয়, বিলাতি আমড়ার অনুসরণে ইঁহাদের ভাষা নাকি ইন্ডিয়ান ইংলিশ।

দ্বিতীয় গ্যাঙের মহাপুরুষ এবং মহামানবীবৃন্দ মহাপ্রাণ শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশকগণ দয়াপরবশ হইয়া অস্মদদিগের কীযে উপকার করিয়াছেন, সুসভ্য শ্বেতাঙ্গদিগের শাসনে, শ্বেতাঙ্গনিষ্ঠীবন সেবনে, শ্বেতাঙ্গদিগের পদলেহনে, শ্বেতাঙ্গদিগের পাদুকার আঘাতে জম্বুদ্বীপের আদিম ভারতীয়রা কীরূপে কতখানি সভ্যতার আলোক লাভ করিয়া কুসংস্কারমুক্ত হইয়াছে, কী করিয়া কেন কীভাবে কী উপায়ে অদ্যাবধি শ্বেতাঙ্গদিগের পদতলে থাকা ভারতীয়দের অবশ্যকর্তব্য তাহা কথা, কাহিনি এবং কিচ্ছার আধারে ইন্ডিয়ান ইংলিশে স্কচ হুইস্কির ন্যায় স্বচ্ছভাবে বুঝাইয়া দেন।

শিক্ষাদীক্ষা সাংস্কৃতিক পরিশীলনের প্রতিমূর্তি মহামান্যা ইংলণ্ডেশ্বরীর অধীনস্থ ব্রিটিশ কমনওয়েলথ্ ও জগদীশ্বরো বা ইয়াংকীশ্বরো বা মার্কিন সরকারের পরিকল্পিত তথা আয়োজিত কেতায় সংকর বুলিতে নেওকলোনিয়ালপোস্টকলোনিয়াল হাইব্রিড তথা মর্কটবৃত্তির হাফআখরাই ও তরজার মজলিশ, সঙ্গে বাই ও খ্যামটার আসর জমজামাট। কমন ও আনকমনওয়েলথের ডিগ্রি, মেডেল ও সার্টিফিকেটওয়ালাওয়ালীরা নিজ নিজ তোবড়া তুবড়ি সঙ্গে করিয়া উপস্থিত হয়েন। বুকার ও পিউলিত্জার পুরস্কারবিতরক ধুরন্ধর সাহেবসম্প্রদায় সকলকে মহা সমাদরের ভাব দেখাইয়া রিসিভ করেন। সাহেব এবং দেশীয় মর্কট সাহেবদিগের জন্য লার্ড কৃষ্ণার ইরোটিক লাইফস্টোরির হাফআখরাই দিয়া আসর শুরু হয়:

মাথুরসংবাদ

(কৃতজ্ঞতা: রূপচাঁদ পক্ষী)

মাই ডার্লিং কালিয়া আমার তুই একটা ফ্রড রে,

তুই রিয়েলি স্ক্রুড মি ওউ গড মাই গড রে!

ডিয়ার কেস্টা তোর ওপরে ছিল আমার হেভি ফেথ

ওউ জিজাস! জিজাস অব ন্যাজারেথ !

মাদার ফাকার দুনম্বরি তুই মথুরায় গিয়ে উধাও হয়ে

                                           গেলি রে

ঠিক জানি তুই নাইট ক্নাব কি ডিস্কোতে গিয়ে ডবকা গার্ল                                   খুঁজে পেলি রে

ভোগা খেয়ে এখন আমার গোল্ডেন বডি ক্রমেই হচ্ছে কালি

সোউ আই থিংক কেষ্টা একটা কাজানোভা কেষ্টা একটা                                                         জালি

তাই ব্লাডি নিগার কেষ্টা এবার

                   তোর আর আমার

              প্রেমের ড্রামার হল শেয

নাউ আই অ্যাম অন্য রাধা অন্য কেতা অন্য বেশ

আমি ঔল্ড হ্যাকনিড শাড়ি ব্লাউজ সব ফেলে দিয়েছি

আমি নতুন যুগের ফ্যাশন মেনে জিনসটিশার্ট পরে নিয়েছি

শোন্ লতিকা শোন্ বিশাখা আমার নাগর এখন তো আর

                            ঐ ব্লাডি নিগার কেষ্টা নয়

আর কতকাল ডার্টি কালো গাঁইয়া ঢ্যামনা সহ্য হয়

আমি বৃন্দাবনের বাদা ছেড়ে হোলি ল্যান্ডে চলে যাব গো

আমি ঐ ক্ষীরের নাড়ু টক দই ফেলে ফাউল কারি আর                                       ব্রান্ডি খাব গো

এবার আমি কেষ্টা ছেড়ে চেষ্টা করে

হোয়াইট ইয়াংগম্যান জিশু খেস্টার প্রেমে পড়ব

ফিল্দি কালো যমুনায় নয় বিকিনি পরে

            জর্ডানের জলে দুজনে মিলে কেলি করব

তারপর ধুতিশাড়ি পরা মাটিতে পাত পেতে ভাতরুটি খাওয়া ট্র্যাডিশনমানা ঔল্ড হ্যাগার্ড ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে কোটপ্যান্ট কণ্ঠবন্ধনী পরিহিত টেবিলে ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ ডিনার খাওয়া সকালসন্ধ্যে কমোডে মলত্যাগ এবং টয়লেট পেপারে শৌচকর্ম করা ফাস্টফুডপিত্সার আরাধক নতুন সিভিলাইজড্ জেনারেশনের জেনারেশনগ্যাপ লইয়া কবিয়ালদের তরজার আসর বসে। অবশেষে আরো অনেক অনেক মেডেল, পুরস্কার ও সার্টিফিকেট বিতরণ হয়। তারপর প্রথম গ্যাঙের কয়েকজন সদস্য তথা গোরা প্রভুদিগের প্রতিনিধিগণ ইন্ডিয়ান লিটরেচার ইন ইংলিশ (যেমন ব্রিটিশ লিটরেচার ইন য়োরুবা আমেরিকান লিটরেচার ইন ভোলফ্ ফ্রেঞ্চ লিটরেচার ইন চাইনিজ ইত্যাদি)…বিষয়ে প্রচুর বিচার বিবেচনা আলোচনা সমালোচনা পর্যালোচনা সংশ্লেষণ বিশ্লেষণ করেন। অতঃপর গোরা প্রভুদিগের প্রচার মহিমায় এই সব কিচ্ছা বিভিন্ন ভাষায় হনুবাদিত হইয়া আসল খাদহীন সতেরো আনা খাঁটি ভারতীয় সাহিত্য হিসেবে পরিচিতি ও মর্যাদা লাভ করে।

বস্তুত উপর্যুক্ত দুই গ্যাঙের মহাপুরুষ ও মহামানবীবৃন্দ পৃথিবীময় বিশেষ করিয়া শ্বেতাঙ্গ প্রভুদিগের নয়াউপনিবেশে রূপান্তরিত পুরনো উপনিবেশের শ্বেতাঙ্গ প্রভুত্ব এবং স্বার্থরক্ষার আড়কাটি অপভাষায় চামচে উপভাষায় দালাল ভদ্র ভাষায় কম্প্রাদর পুরাতন উপনিবেশে ওয়ারেন হেস্টিংসের বহুতর ধান্ধাবাজির সহায়ক নব মুনসি যেইরূপ শোভাবাজারের সমাজপতি রাজা নবকৃষ্ণ দেবে, শ্রী শ্রী কোম্পানি বাহাদুরের আফিঙের চোরাই চালানের সাকরেদি করিয়া চিত্পুরের পিরালি দোয়ারকা ঠাকুর যেরকম মহামান্য প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরে পরিণত হইয়াছিলেন নয়াউপনিবেশে মেকলের জারজগোষ্ঠীর প্রধানরাও সেইরূপ বাবা গোঁসাই এবং মা গোঁসাইয়ের মতো মানমর্যাদা পাইয়া থাকেন।

                                                                       ( dasgupta2812@gmail.com)