Jacques Prévert : Lanterne magique de Picasso et d’autres poèmes জাক প্রেভের: পিকাসো-র ম্যাজিক লন্ঠন আর আরো কয়েকটি কবিতা অনুবাদঃ পুষ্কর দাশগুপ্ত

Jacques Prévert : Lanterne magique de Picasso et d’autres poèmes

জাক প্রেভের: পিকাসোর ম্যাজিক লন্ঠন আর আরো কয়েকটি কবিতা অনুবাদঃ পুষ্কর দাশগুপ্ত

prevert

বিশ শতকের সব চেয়ে জনপ্রিয় ফরাসি কবিদের একজন হলেন জাক প্রেভের (Jacques Prévert , ১৯০০১৯৭৭) আর তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতার বই হল,কথা (পারোল)। প্রেভেরএর অনেকগুলো কবিতা ইতিপূর্বে সরাসরি ফরাসি থেকে (যেমন, অরুণ মিত্র, মাহমদ শাহ কোরেশি, পলাশবরণ পাল , পলাশ ভদ্র, ইত্যাদি) বা ইংরেজি অনুবাদ থোকে (যেমন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, শঙ্খ ঘোষ, ইত্যাদি) বাংলা ভাযায় অনূদিত হয়ে বাঙালি কবিতাপাঠকের পরিচিত ও প্রিয় কবিতায় পরিণত হয়। প্রেভের তাঁর কবিজীবনের শুরুতে স্যুররেআলিসম্ আন্দোলনে যোগ দেন। আমরা এখানে প্রেভেরএর দীর্ঘ, একটি স্যুররেআলিস্ত কবিতা পিকাসোর ম্যাজিক লন্ঠন ও আর কয়েকটি জনপ্রিয় কবিতার বাংলা অনুবাদ উপস্থাপিত করছি:

Jacques Prévert :

Magique lanterne de Picasso et d’autres poèmes

জাক প্রেভের:

পিকাসোর ম্যাজিক লন্ঠন আর আরো কয়েকটি

কবিতা

অনুবাদঃ পুষ্কর দাশগুপ্ত

 

আলিকান্তে

ALICANTE*

টেবিলের ওপর একটা কমলা লেবু

মেঝের গালিচার ওপর তোমার গাউন

আর তুমি আমার বিছানায়

বর্তমানের মধুর উপহার

রাতের শীতলতা

জীবনের ঊষ্ণতা

 

*Alicante  – স্পেনের আলিকান্তে প্রদেশের  বিখ্যাত মদ।

শেষ ভোজ

LA CÈNE

ওঁরা খাওয়ার টেবিলে

ওঁরা খাচ্ছেন না

ওঁদের মন ওঁদের থালার মধ্যে নেই

ওঁদের থালাগুলো সোজাসুজি খাড়া হয়ে আছে

ওঁদের মাথার পেছনে

 

রাতের প্যারিস

PARIS AT NIGHT

দেশলাইয়ের তিনটে কাঠি একের পর এক জ্বালানো হল

প্রথম কাঠিটা তোমার পুরো মুখটা দেখার জন্যে

দ্বিতীয়টা তোমার চোখদুটো দেখার জন্যে

শেষটা তোমার ঠোঁটদুটো দেখার জন্যে

আর পুরো অন্ধকারটা

তোমাকে বুকে জড়িয়ে সবকিছু স্মরণ করার জন্যে

 

হেমন্ত

L’AUTOMNE

বাগানের সরু পথের মাঝখানে

একটা ঘোড়া মুখ থুবড়ে পড়ে

পাতাগুলো তার ওপর ঝরে পড়ছে

আমাদের ভালোবাসা শীতে কাঁপতে থাকে

আর সূর্যটাও

দেশে ফেরা

LE RETOUR AU PAYS

ব্রিটানির একটা লোক গোটা কয়েক কেলেংকারি করে

জন্মভূমিতে ফিরে এল

দোয়ারননের কারখানার সামনে ও ঘুরে বেড়ায়

কাউকে ও আর চিনতে পারে না

কেউ আর ওকে চিনতে পারে না

ও খুবই মনমরা হয়ে থাকে।

ক্রেপপিঠের দোকানে ও ক্রেপ খেতে ঢোকে

কিন্তু ও খেতে পারে না

কি যেন একটা ওর গলায় ক্রেপগুলোকে আটকে রাখে

ও দাম মিটিয়ে দেয়

বেরিয়ে পড়ে

ও একটা সিগারেট ধরায়

কিন্তু সিগারেটটা ও খেতে পারে না ।

কি যেন একটা

কি যেন ওর মনে পড়ে যায়:

যখন ও ছোট ছিল কেউ একটা ওকে বলেছিল

তোর জীবন শেষ হবে ফাঁসিকাঠে

আর বছরের পর বছর

কখনো ও কিছুই করতে সাহস পায় নি

এমন কী রাস্তা পার হতেও নয়

এমন কী সাগর পারি দিতেও নয়

কিছুই নয় একেবারে কিছুই নয়।

ওর মনে পড়ে যায়।

যে ওকে সব জানিয়ে দিয়েছিল সে হোল গ্রেজিয়ার খুড়ো

সে গ্রেজিয়ার খুড়ো সবার দুর্ভাগ্য ডেকে আনত

বদমাস!

আর ব্রিটানির লোকটা ওর বোনের কথা ভাবল

যে বোন ভোজিরারএ কাজ করে

যুদ্ধে মারা যাওয়া ওর ভাইয়ের কথা ভাবল

বিষাদ ওকে জড়িয়ে ধরে

যাকিছু ও দেখেছে

আরেকবার ও চেষ্টা করল

একটা সিগারেট ধরাতে

কিন্তু সিগারেট খেতে ওর ইচ্ছে হোল না

তখন ও গ্রেজিয়ার খুড়োর সঙ্গে দেখা করবে বলে ঠিক করল

ও গেল

দরজা খুলল

খুড়ো ওকে চিনতে পারে না

কিন্তু ও তাকে চিনতে পারে

আর তাকে বলে:

নমস্কার গ্রেজিয়ার খুড়ো

আর তারপর ও খুড়োর ঘাড় মটকাল ।

আর দুডজন ক্রেপ

আর একটা সিগারেট খেয়ে

ক্যাঁপের ফাঁসিকাঠে ও ওর জীবন সাঙ্গ করল।

 

পিকাসোর ম্যাজিক লণ্ঠন

LANTERNE MAGIQUE DE PICASSO

একটি নারীর সবগুলি চোখ একই ছবিতে চঞ্চল

নোংরা রঙচঙে কাগজের একটা স্থির ফুলের তলায় ভাগ্যতাড়িত প্রিয়জনের আদল

চেয়ারের অরণ্যে খুনের সাদা ঘাস

শ্বেতপাথরের একটা টেবিলের ওপর এফোঁড় ওফোঁড় করা পিচবোর্ডের এক ভিখিরি

স্টেশনের একটা প্ল্যাটফর্মের ওপর একটা চুরুটের ছাই

একটা প্রতিকৃতির প্রতিকৃতি

একটা শিশুর গোপন রহস্য

রান্নাঘরের সিন্ধুকের অনস্বীকার্য দীপ্তি

হাওয়ায় একটুকরো ন্যাকড়ার তাত্ক্ষণিক সৌন্দর্য

পাখির চাউনিতে ফাঁদের উন্মাদ আতঙ্ক

সেলাইফাঁসা একটা ঘোড়ার কিম্ভুত হ্রেষা

গলায় ঘণ্টাবাঁধা খচ্চরগুলির অদ্ভুত সঙ্গীত

টুপির মুকুট পরানো নিহত ষাঁড়

ঘুমন্ত লালচুলো একটি মেয়ের তুলনাবিহীন পা আর তার একটুখানি দুশ্চিন্তার

বিরাট কান

হাত দিয়ে ধরে ফেলা চিরন্তন গতি

সৈন্ধর লবণের একটা কণার বিশাল পাথরের মূর্তি

প্রতিটি দিনের আনন্দ আর মনে যাওয়ার অনিশ্চয়তা আর মৃদু হাসির ক্ষতস্থানে

ভালোবাসার বর্শাফলক

সবচেয়ে নগণ্য কুকুরটির সবচেয়ে দূরবর্তী নক্ষত্র

আর জানলার কাচে রুটির কোমল স্বাদ নোনতা

হারিয়ে যাওয়া আর ফের খুঁজে পাওয়া আর ভেঙে টুকরো টুকরো হওয়া আর আবার

গড়ে তোলা প্রয়োজনের নীল ছেঁড়া পোশাক পরানো ভাগ্যরেখা

পায়েসের ওপর একটা মালাগার কিসমিসের অবাক করা আবির্ভাব

একটা খুপরির মধ্যে একটি লোক লাল মদের ঢোকে দেশের যন্ত্রণাকে কাবু করে

দিচ্ছে

একগোছা মোমবাতির চোখ ধাঁধানো আলো

ঝিনুকের মতো হাঁকরা সমুদ্রমুখো একটা জানলা

ঘোড়ার খুর আর একটা বড় ছাতার খালি পা

কনকনে ঠাণ্ডা একটা বাড়ির ভেতর নিঃসঙ্গ একটা ঘুঘুর অতুলনীয় লাবণ্য

অকেজো ঘড়ি আর তার হারানো মুহূর্তেরা

স্বপ্নচারী সূর্য মাঝরাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন আর হঠাৎ চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়া সৌন্দর্যকে

আচমকা জাগিয়ে দেয় তার কাঁধে চিমনির ওভারকোট চাপিয়ে দেয় আর সাঁটা

কাগজের পোশাক আর হিস্পানি সাদার মুখোস লাগানো ধোঁয়ার অন্ধকারের

মধ্যে সঙ্গে করে তাকে টানতে টানতে নিয়ে যায়

এবং আরো অনেক কিছু

শিল্পের শৈশবকে দোল খাওয়াতে থাকা সবুজ কাঠের একটা গিটার

পোঁটলাপুঁটলি সমেত একটা রেলের টিকিট

যে মুখ একটা প্রাকৃতিক দৃশ্যের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে হাতটা সেই মুখের

প্রাকৃতিক পরিবেশটা পালটে দেয়

আশ্চর্য হাসিমুখ উত্ফুল্ল আর বেহায়া

আনকোরা নগ্ন একটি মেয়ের আদর করা কাঠবেড়ালিটা

বোতল রাখার খোপ খোপ বাক্স কি বাদ্যযন্দ্রের খোপ থেকে জননেন্দ্রিয়ের আকার

আর দীর্ঘস্থায়ী সবুজ উদ্ভিদের সাজসজ্জার মতো হঠাৎ অলক্ষ্যে

বেরিয়ে আসে

মেয়েটিও হঠাৎ অলক্ষ্যে বিধুর আর হাড় জিরজিরে বুড়ো প্রাচীন শিল্প

দ্রব্যের মতো সুন্দর একটা বিদ্বজ্জনপরিষদের তালগাছের পচে যাওয়া

গুঁড়ি থেকে বেরিয়ে আসে

ভোরবেলার ফুটির আকারের ঘণ্টাগুলো একটি সান্ধ্যপত্রিকার চিত্কারে চুরমার

একটা ঝুড়ির তলা থেকে বেরিয়েআসা কাঁকড়ার ভয়াবহ দাঁড়াগুলো

শান্তি পাওয়া আসামীর দুফোঁটা জল নিয়ে একটি গাছের শেষ ফুল

আর ঈর্ষার গাঢ় লাল ডিভানের ওপর একাকী আর তার প্রথম স্বামীদের বিবর্ণ ভীতিতে

পরিত্যক্ত দারুণ সুন্দরী বধূ

আর তারপর শীতের একটা বাগানে সিংহাসনের পিঠের ওপর অস্থির একটা

মেনিবেড়াল আর একজন রাজার নাকের ফুটোর নিচে তার লেজের গোঁফ

বেতের ঝুড়ির কাছে বসা এক বুড়ির পাথুরে মুখে দৃষ্টির ফুটন্ত পাথুরে চুন

আর ধপধপে সাদা বাতিঘরের রেলিঙে সবে লাগানো রেড অক্সাইডের ওপর কুঁকড়ে

যাওয়া ঠাণ্ডায় নীল দুটো হাত নিয়ে ঘুরে বেড়ানো একটা ভাঁড় সমুদ্রের দিকে

তাকিয়ে রয়েছে আর ডুবন্ত সূর্যের আলোয় ওর বিরাট বিরাট ঘোড়াগুলো ঘুমোচ্ছে

আর তারপর ওরা জেগে ওঠে ওদের নাকের ফুটো থেকে বেরিয়ে আসছে

ফেনা ওদের ফসফরাসের মতো জ্বলতে থাকা চোখ বাতিঘরের আলো

আর তার ঘুরতে থাকা ভয়ংকর আগুনের শিখায় উদ্ভ্রান্ত

একজন ভিখিরির মুখের ভেতর পুরো ঝলসানো একটা বাবুই

পার্কের ভেতর পাগল এক পঙ্গু যুবতী ছেঁড়া ছেঁড়া যান্ত্রিক হাসি হাসতে হাসতে

কোলে একটা ঘুমে অসাড় বাচ্চাকে দোল খাওয়াতে খাওয়াতে তার নোংরা

খালি পায়ের ধুলোর মধ্যে বাপের আদল আর তার হারিয়ে যাওয়া

চেহারা আঁকে আর ছেঁড়া কাপড়ে জড়ানো নবজাতককে পথচারীদের দেখায়

এবার তাকাও আমার খোকামণির দিকে তাকাও দেখো আমার খুকুমণিকে

আমার সাতরাজার ধন মনিককে আমার নিজের বাচ্চাটাকে একদিকে ও ছেলে

অন্যদিকে ও মেয়ে প্রতিদিন ভোরে ছেলেটা কাঁদে প্রতিদিন সন্ধ্যায়

মেয়েটাকে শান্ত করি আর দেয়ালঘড়ির মতো ওদের দম দিই

আর এছাড়া গোধূলি দেখে মুগ্ধ বাগানের পাহারাদার

একটা মাকড়সার জালে ঝুলন্ত একটা মাকড়সার জীবন

ভাঙা দোলনায় একটা পুতুলের অনিদ্রা আর চিরকালের জন্য খোলা তার

বড় বড় কাচের চোখ

সাদা একটা ঘোড়ার মৃত্যু একটা চড়ুইয়ের যৌবন

পোঁলোদি সড়কে একটা স্কুলের দরজা

যার নামে তাঁদের নাম সেই মহান অগাস্টিনরা ছোট্ট রাস্তায় একটা বাড়ির

লোহার রেলিঙে বিদ্ধ

একটি মাছকে ঘিরে অঁতিবের সমস্ত জেলে

একটা ডিমের প্রচণ্ডতা আর একটা সৈনিকের কষ্ট

পাপোষের তলায় লুকিয়ে রাখা একটা চাবির ভুলতে না পারা অস্তিত্ব

আর মানুষের মতো দেখতে বিরাট মোটা একটি ছায়ামূর্তির কর্তৃত্ব করা সুডোল হাতে ধ্বজচিহ্ন আর মৃত্যুর রেখা আর যুদ্ধের সম্মান আর বিভীযিকার সংগ্রহশালার অন্ত্যেষ্ঠির বিরাট ঝুলবারান্দার ওপর চোখে পড়ার মত নিশান আর জমকালোভাবে উত্তেলিত স্বস্তিকার মতন ক্রুসিফিক্সগুলির পেছনে সতর্কভাবে আড়াল করা আর প্রলাপ বকতে থাকা খাটো দুটিপা আর লম্বা ঊর্ধ্বাঙ্গ নিয়ে হাস্যকর জীবন্ত মূর্তি কিন্তু মহানায়কের মৃদুহাসিটুকু সত্ত্বেও তার বিবর্ণ আর লালচেহলুদ মাংসের মুখোসের ওপর রাতের

পেচ্ছাবখানায় নতুন জমানার তাবৎ হতভাগা নিপীড়নকারীদের লেখা অশ্লীল হামবড়া গ্রাফিত্তির মত খোদাই করা ভয় অবসাদ ঘূণা আর নির্বুদ্ধিতার অনিবার্য আর শোচনীয় ছাপ লুকোতে অসমর্থ

আর তার পেছনে একটুখানি ফাঁক করা কূটনৈতিক ডাকের থলির শবাগারে

পয়সাওয়ালা নিখুঁত লোকগুলোর স্বর্ণপিণ্ডের আঘাতে ক্ষেতের মধ্যে

আক্রান্ত এক চাষির সাদামাটা মৃতদেহ

আর পাশেই টেবিলের ওপর পেটের মধ্যে গোটা একটা সহর নিয়ে হাঁকরা

একটা গ্রেনেড

আর গুঁড়িয়ে দেওয়া আর রক্ত শুষে নেওয়া ঐ সহরের যন্ত্রণা

যেখানে মৃত একটা জিপসি এখনো স্বপ্ন দেখছে

সেই স্ট্রেচার ঘিরে পুরো ঘোড়সওয়ার রক্ষীবাহিনীর লম্ফঝম্ফ

আর প্রেমিক কর্মঠ নিশ্চিন্ত আর চমত্কার একটা মানবগোষ্ঠীর সমস্ত রাগ হঠাৎ

চোখের সামনে জবাই করা একটা মোরগের রক্তিম আর্তনাদের মতো ফেটে

পড়ে

আর কম বেতনের মানুষের সৌর বর্ণালী যা শ্রমিকসদনের রক্তাক্ত নাড়িভুড়ি

থেকে একেবারে রক্তাক্ত অবস্থায় বেরিয়ে আসে হাতের ডগায় ধরা

দুঃখদারিদ্র্যের মলিন দীপ্তি গের্ণিকার রক্তঝরা বাতি আর তার সত্যিকারের

রগরগে আলোয় আবিষ্কার করে ব্যবহারে ব্যবহারে জীর্ণ মজ্জা অবধি ফাঁপা

রঙচটা একটা জগতের বিভত্স নকল রঙগুলি

যে জগত্টা উঠে দাঁড়িয়ে মারা গেল

যে জগৎ দণ্ডাজ্ঞা পাওয়া

আর ইতিমধ্যে ভুলে যাওয়া

জনস্রোতে প্রবাহিত জলের হাজার আগুনে ডুবে অঙ্গার হওয়া

যেখানে গণরক্ত অবিশ্রাম ছুটে চলে

অফুরন্ত

পৃথিবীর ধমনীতে ধমনীতে আর শিরায় শিরায় আর তার সত্যিকারের

ছেলেমেয়েদের ধমনীতে ধমনীতে আর শিরায় শিরায়

আর শুধু একটুকরো সাদা কাগজে আঁকা তার যেকোন সন্তানের মুখে

অঁদ্রে ব্র্যতোঁর মুখে পল এল্যুয়ারের মুখে

রাস্তায় চোখে পড়া কোন ঠেলাওয়ালার মুখে

প্রিমরোজফুলের বেসাতির চোখের ইশারার আভা

চেস্টানাটফলের ভাস্করের বিকসিত হাসি

আর একটা ইস্ত্রির পাশে দাঁড়ানো একজন প্লাস্টারের মেষপালকের হাতে প্লাস্টারের

মধ্যে খোদাই করা কোচকানো একটা সত্যিকারের ব্যা ব্যা করা প্লাস্টারের

ভেড়া

চুরুটের খালি একটা বাক্সের পাশে

ভুলে ফেলে যাওয়া একটা পেন্সিলের পাশে

ওভিদের মেটামরফসিসের পাশে

একটা জুতোর ফিতের পাশে

অনেক বছরের ক্লান্তিতে পাকাটা একটা আরামকেদারার পাশে

একটা দরজার কলিংবেলের পাশে

যাতে একটা ঠিকে ঝির শৈশবের স্বপ্নগুলি জ্বলন্ত নুড়ির ওপর হাঁপধরা

মরোমরো মাছগুলোর মতো একটা বেসিনের ঠাণ্ডা পাথরের ওপর

মুমূর্যু সেই একটা স্টিললাইফের পাশে

আর মরিয়া ঠিকে ঝির মরা মাছের আর্তনাদে বাড়িটা আগাগোড়া আন্দোলিত হঠাৎ

যে ঝি নৌকাডুবিতে পড়ে সেন নদীর ঢেউয়ের আঘাতে ঊর্ধ্বে উত্তোলিত হয়ে

করুণভাবে ভেরগালঁর বাগানে সেন নদীর কুলে আছড়ে পড়তে যাচ্ছে

আর সেখানে হতবুদ্ধি ঝিটা একটা বেঞ্চির ওপর বসে

আর সে তার হিসেবনিকেশ করে

আর বিজেকে তার পুরনো দিনের স্মৃতিতে পচে গলে সাদা আর গমের মতো

ছিন্নমূল বলে মনে হয় না

শুধুমাত্র একটা ঘর তার বাকি থাকে একটা শোবার ঘর

আর যেই কিছুটা সময় পাওয়ার বৃথা আশায় ওটাকে নিয়ে সে হেড টেল করতে

যাবে

অমনি তেকোণা আয়নার মধ্যে ভীষণ ঝড় শুরু হয়

তার সঙ্গে বেঁচে থাকার আনন্দের সবকটি আগুনের শিখা

জৈব উত্তাপের সবকটি বিদ্যুৎচমক

খোশ মেজাজের সবকটি আভা

আর বিপর্যন্ত বাড়িটাকে চুড়ান্ত ঘা দিয়ে

শোবার ঘরের পর্দাগুলো জ্বালিয়ে দেয়

আর চাদরগুলোকে বিছানার পায়ের দিকে আগুনের গোলার আকারে গড়িয়ে

দিয়ে

স্মিত হেসে সমস্ত জগতের সামনে উন্মোচিত করে

সবগুলো টুকরো সমেত প্রেমের ধাঁধা

তার সবগুলো বাছাই করা টুকরো পিকাসোর বাছাই করা

একজন প্রেমিক তার প্রেমিকা আর ওর দুপা তার কাঁধে

ওর দৃষ্টি পাছায় আর হাত প্রায় সর্বত্র

পায়ের পাতা দুটো আকাশের দিকে তোলা আর উথাল পাথাল স্তন

দুটি শরীর আলিঙ্গনবদ্ধ পাল্টাপাল্টি করা সোহাগ করা

ছিন্নমুণ্ড মুক্ত আর উত্ফুল্ল ভালোবাসা

পরিত্যক্ত মাথা গালিচার ওপর গড়াতে থাকা

ফেলে দেওয়া ভুলে যাওয়া হারিয়ে যাওয়া ভাবনাগুলো

আনন্দ আর সুখে ক্ষতি করার ক্ষমতা লোপ করে দেওয়া

রেগে ওঠা ধারণাগুলো রাগরঞ্জিত ভালোবাসায় হতবুদ্ধি

ধারণাগুলো ভালোবাসার প্রচণ্ড জাহাজডুবি আসছে বুঝতে পেরে মৃত্যুর বেচারা

ইঁদুরগুলোর মতো মাটিতে ফেলে দেওয়া আর মাটিতে ঢাকা

ধারণাগুলো ঘরের দরজায় রুটির পাশে জুতোর পাশে আবার নিজের

জায়গায় রাখা

পুড়িয়ে খাক করা লাফিয়ে পার হওয়া হাওয়ায় মিলিয়ে দেওয়া আদর্শলুপ্ত

ধারণাগুলো

অনুরক্ত এক জগতের অদ্ভুত উদাসীনতার সামনে পাথর হয়ে যাওয়া

ধারণাগুলো

ফের খুঁজে পাওয়া এক জগতের

অনস্বীকার্য আর অব্যাখ্যাত এক জগতের

শিষ্টাচারশূন্য অথচ বাঁচার আনন্দে পূর্ণ এক জগতের

সংযমী আর মাতাল এক জগতের

বিষন্ন আর আনন্দিত

কোমল আর হিংস্র

বাস্তব আর পরাবাস্তব

ভয়ংকর আর মজাদার

রাতের আর দিনের

স্বাভাবিক আর অস্বাভাবিক

দারুণ সুন্দর এক জগতের

১৯৪৪


এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান