কলিকাতা সমাচার
পুষ্কর দাশগুপ্ত
মুখবন্ধ
ভাষা আমাদের প্রাত্যহিক ব্যবহারিক সংজ্ঞাপনের মাধ্যম আবার তা একই সঙ্গে শিল্পের উপাদান হয়ে উঠতে পারে । ভাষাশিল্পী ভাষাকে অন্য যে কোনো শিল্পের উপদানের মতোই ব্যবহার করেন। ভাষাকে রূপান্তরিত করে (রূপকার্থে পুড়িয়ে, পিটিয়ে, কারিগরি করে, কারুকাজ করে) নির্বাচিত শব্দের ধ্বনি–সংগঠনে, বিশেষ বাক্যপ্রকরণে, বাচন–সংস্থানে তথা বাচন–কৌশলে আর সাদা পাতার ওপর, অনুভূমিক বা বা/এবং উল্লম্ব মুদ্রণবিন্যাস আর হরফের বৈচিত্র্যের ব্যবহারে ভাষিক শিল্পবস্তু সৃষ্টি করেন। ভাষার উপাদানেই তৈরি হয় বাচিক শিল্প বা ভাষাশিল্প । এই ভাষাশিল্পের উৎপাদনকে সাধারণভাবে বলা হয় সাহিত্য । এই সাহিত্য ঐতিহ্য–নির্ধারিত বিভিন্ন বর্গ (গদ্য, পদ্য, কাহিনি, কাব্য…) ও উপবর্গের (উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, মহাকাব্য, গীতি কবিতা…) উপরাচনিক শ্রেণী–অভিধা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
বাংলা ভাষায় আমি যা রচনা করেছি বা করি তা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস দ্বারা নির্ধারিত বাঙালি পাঠকের প্রত্যাশার দিগ্বলয়ের নিয়ন্ত্রণে গড়ে ওঠা তথাকথিত সাহিত্যের ধারণার সঙ্গে হয়ত ঠিক খাপ খায় না। প্রশ্ন ওঠে এই ভাষিক উৎপাদনগুলো কী? কবিতা ? ? ? ? ? ? ? ? অথবা এগুলো কী বৃহদ্ধর্মপুরাণের ধর্ম–বিরোধী রাজা বেণ–এর সংকরবর্ণ সৃষ্টির মতো বাংলা সাহিত্য–জগতে প্রথাবিরোধী সংকর রচনা সৃষ্টি ? তাই স্বীকৃত বর্গ বা জঁর–র সীমা পেরিয়ে আমি আমার ভাষিক নির্মাণকে বলি পাঠ্যবস্তু অর্থাৎ পড়ার জন্য তৈরি বস্তু। এ রকম খুবই পুরনো রচনা পাঠ্যবস্তু বা পড়ার জন্য তৈরি রচনা আমি বিভিন্ন দফায় উপস্থিত করব। কোনো রচনাই শেষ হয়না, তাই প্রতিটি রচনায় দুয়েকটি জায়গায় কমবেশি পালটেছি।
কলিকাতা সমাচার
পুষ্কর দাশগুপ্ত
ধন্য ধন্য মহামান্য মহামহিম ধার্ম্মিক ধর্ম্মাবতার ধর্ম্মপ্রবর্ত্তক অখণ্ড দৌর্দণ্ডপ্রতাপ দুষ্টনিবারক শিষ্টপ্রজাপালক সদ্বুদ্ধি সদ্বিবেচক সদ্বিচারক অস্মদ্দেশের সম্পদাপহরক ইংরাজ কোম্পানী বাহাদুরের প্রতিষ্ঠিত এই কলিকাতা নামক মহানগরে আসিয়া আধুনিক বাবুদিগের বৃদ্ধপিতামহ প্রপিতামহ পিতামহ কিম্বা পিতা প্রথমে সাহেবলোকদিগের আবশ্যিক চাকর খানসামা খেদমতগার মসালচি বাবুরচি আর্দালি ভেস্তি মেহতর ধোবা হুকাবরদার বেহারা পেয়াদা চৌকিদার দরবান অতঃপর স্বর্ণকার বর্ণকার চর্মকার চটকার পটকার মঠকার বেতনোপভুক হইয়া কিম্বা রাজের সাজের কাঠের খাটের ঘাটের মাঠের ইটের সরদারি চৌকিদারি দালালি জালিয়াতি জুয়াচুরি কুয়াচুরি পোদ্দারি করিয়া অবশেষে অধিকতর ধনাঢ্য শ্রুতকীর্তি হইয়াছেন
*
শিরে হস্ত দিয়া “ওঁ ব্রহ্মণে নমঃ” (সর্বত্র দক্ষিণ হস্ত দিতে হইবে) মুখে গায়ত্রীচ্ছন্দসে নমঃ” হৃদি “ওঁ মাতৃকাসরস্বত্যৈ দেবতায়ৈ নমঃ” গুহ্যে “ওঁ ব্যঞ্জনেভ্যোবীজেভ্যোনমঃ” পাদয়োঃ “ওঁ স্বরেভ্যঃ শক্তিভ্যোনমঃ”, পরে “অং, কং, খং, গং, ঘং, ঙং, আং অঙ্গুষ্ঠাভ্যাং নমঃ” “ইং, চং, ছং, জং, ঝং, ঞং, ঈং, তর্জনীভ্যাং স্বাহা” “উং, টং, ঠং, ডং, ঢং, ণং, ঊং, মধ্যমাভ্যাং বষট্” “এং, তং, থং, দং, ধং, নং, ঐং, অনামিকাভ্যাং হূ” “ওং, পং, ফং, বং, ভং, মং, ঔং কনিষ্ঠ্যাভ্যাং বৌষট্” “অং, ষং, রং, লং, ষং, সং, হং, লং, ক্ষং, অঃ করতলপৃষ্ঠাভ্যাং ফট্” এই বলিয়া করন্যাস করিবে
*
বড় সাহেব বিলাত হইতে আসিয়া কলিকাতা মোকামে পঁহুছিলেন
নেপো মারে দইয়ের মত এতে বিলক্ষণ গুড় আছে
বাবু চুনোগলির আনড্রু পিদ্রুসের পৌত্তুর বল্লে তাঁরা বড় খুশী ওরে পোড়ামুখ পোড়াকপাল কুক্ষণজন্মা
আজব সহর কলকেতা রাঁড়ী বাড়ী জুড়ী গাড়ী মিছে কথার কি কেতা
*
তুই যদি মোরে না মারিস তবে তোর পুতের মাথা খাস লো খানকি হাঁলো ঝি জামাই খাগি কি বলছিস তোরা শুনছিস গো এ আঁটকুড়ি রাাঁড়ির কথা
*
তত্রস্থ দেবরাজ ইন্দ্রের সভাগৃহতুল্য সুখকর সুরম্য সুসজ্জিত নিরূপম বর্ণচ্ছটাযুক্ত বিদ্যুতালোকসমুদ্ভাসিত তিব্বত কাশ্মীর ইরান ইরাক তুর্ক তাতারাদি অনেকানেক দূরবর্তী জনপদ হইতে সমাগত বর্ণবহুল গালিচায় আচ্ছাদিত মেঝে সুপ্রশস্ত হোটেলকক্ষে কেহ২ স্যুট বুট বো নেকটাই প্যাণ্টলুন তৎসহ শার্ট হাওয়াইশার্ট টিশার্ট পাঞ্জাবি মির্জাই ফতুয়া কিংবা নিজ২ উদ্ভাবনীক্ষমতা দ্বারা সৃজিত নামগোত্রহীন কামিজ পরিশোভিত কন্দর্পের কান্তিগর্বঅপহর মিস্টারবৃন্দ এবং উর্বশী রম্ভা তিলোত্তমা বিদ্যুৎপর্ণা পুণ্ডরীকা মেনকা ঘৃতাচী বিশ্বাচী অলম্বুষা সরষা মঞ্জুঘোষা সুবাহু সুরথা সুকেশী সুরম্যাদি মুনিজনের মতিভ্রমকারিণী অমরাবতীর বেশ্যাদিগের রূপলাবণ্য তথা বসনভূষণেরে পরাস্ত করিবারে সক্ষম কামিনীশরীরের বিভিন্ন প্রদেশের বন্ধুরতার সম্যক্ প্রদর্শক বিচিত্র আকার ও বিবিধ প্রকারের শাড়ি পাৎলুন স্ল্যক্স্ মিনি ম্যাক্সি গাউন স্কার্ট গেঞ্জি জ্যাকেট কুর্তা পাঞ্জাবি শার্ট টপ ইত্যাদি মহানগরীস্থ খলিপাকুলচূড়ামণিসকলের ঘর্মনিঃস্রাবকারী তথা তাহারদিগের বুদ্ধি এবং কুশলতার প্রমাণ পরিচ্ছদমূহে অর্ধাবৃতা স্বল্পাবৃতা কি প্রায় অনাবৃতা তৎসহ কনক রজত জহরৎ তাম্র পিত্তল সিসা দস্তা লৌহ কাষ্ঠ বেত্র অস্থি শোলা রুদ্রাক্ষ স্ফটিক শঙ্খ শামুক ঝিনুকাদিতে বিনির্মিত ভূষণাবলী দ্বারা সালঙ্করা মিসিস এবং মিস অভিধাযুক্তা বরাঙ্গনাসকল আপন২ শেভ্রলে পণ্টিয়াক জাগুয়ার মের্সেদেজ কাডিয়াক প্যোজো ফোর্ড ব়্যনো বুইক পর্শে ফেরারি টইয়োচা ইত্যাদি স্বয়ংচালিত শকটারোহে হোটেলদ্বারস্থ দ্বারীর সেলাম গ্রহণ করতঃ একে২ ক্রমান্বয়ে প্রবিষ্ঠ হইতে থাকিলে উক্ত সুরম্য সুবৃহৎ কক্ষ হাইশব্দারব্ধ কুশলসম্ভাষণে মুখরিত হইয়া উঠিলেক পরে পুরুষসকল ও কামিনীগণেরা উর্দিপরিধান রেকাবিতে পানপাত্রবাহীদিগের স্থান হইতে আপন আপনকার রুচি অনুযায়ী হুইস্কি ভদকা জিন শ্যাস্পেন শেরি পোর্ট মার্তিনি মোজেল ফরাসিসক্ল্যারেট বার্গাণ্ডি কিম্বা বিভিন্ন সুরা এবং সুরাসারের সংমিশ্রণে বারটেন্ডার অভিধেয় সুরাতত্ত্ববিজ্ঞানী হোটেলকর্মীর নির্মাণ ককটেল ইত্যাদি অদিতিনন্দনদিগের সেব্য সোমরস অপেক্ষাও বুঝিবা উৎকৃষ্ট বিচিত্র আস্বাদ বহুতর বর্ণ ও বিবিধ আঘ্রাণযুক্ত অলোকসামান্য পানীয়পূর্ণ ধৃতরাষ্ট্রতনয় দুরাত্মা দুর্যোধনের ভ্রমোৎপাদক স্ফটিক হইতেও বুঝিবা স্বচ্ছতর বিবিধ কারুকর্ম চিত্রসকলে অলংকৃত পানপাত্র সাদরে গ্রহণ করতঃ অনন্তর তাহাদিগেতে ধীরে২ চুমক প্রদান করিতে২ পরিচিত অর্ধপরিচিতি অল্পপরিচিত স্বল্পপরিচিত অত্যল্পপরিচিত বিভিন্ন নারীপুরুষদিগের সহিত সদালাপে নিরত হইলেন ।।
*
জাব চারনক বটুকখানা অঞ্চল দিয়া যাতায়াত করিতেন, তথায় একটা বৃহৎ বৃক্ষ ছিল, তাহার তলায় বসিয়া তিনি মধ্যে২ আরাম করিতেন ও তামুক খাইতেন, সেই স্থানে অনেক ব্যাপারীরাও জড় হইত। ওই গাছের ছায়াতে তাঁহার এমনি মায়া হইল যে, সেই স্থানে কুঠী করিতে স্থির করিলেন । সূতানুটি, গোবিন্দপূর ও কলিকাতা এই তিন গ্রাম একেবারে খরিদ হইয়া আবাদ হইতে আরম্ভ হইল, পরে বাণিজ্য নিমিত্ত নানা জাতীয় লোক আসিয়া বসতি করিল ও কলিকাতা ক্রমে ক্রমে সহর হইয়া গুলজার হইতে লাগিল।
*
মহিলা বললেন, ‘পেটে ভাত নেই, পরনের কাপড় শতচ্ছিন্ন, বাড়ির ছেলেদের দুবেলা পেট ভরে খেতে দিতে পারি না, তার ওপর যদি তৃষ্ণার সময় একঘটি জল না পাই, তাহলে মাথা ঠিক থাকে? আপনারা ছবি তুলে কাগজে লিখে কী করবেন?’…
বস্তিতে বেশির ভাগই খাটা পায়খানা । নোংরা চারদিকে । সি এম ডি এ কয়েকটি করে সেফটি প্রিভি করে দিয়েছে । সেগুলি বন্ধ হয়ে উপছে পড়ছে ।… শুনলাম, ২ দিন আগে এখানেই জল নিয়ে মারামারি হয়েছে, বোমা পড়েছে । ৪৪ নম্বর বস্তিতে একটি টিউবওয়েলের ওপর হাজার চারেক লোক নির্ভর করেন । রাত তিনটা থেকে জলের জন্য লাইন পড়ে । এক ভদ্রলোক বললেন, তিনি রাত একটার সময় জল তুলতে যান, ওই সময়টা কল ফাঁকা থাকে।
আনন্দবাজার পত্রিকা ২৬ এপ্রিল…
*
প্রথমে মৎস্যক্রীড়া তৎপরে জলের ফোয়ারা অনন্তর দোলন প্রভৃতি দেখিতে২ রাত্রি হইল তথাচ বাবুর কনিষ্ঠ ভ্রাতা বাবু ও সাহেব বিবির আনন্দ বৃদ্ধি করণ হেতুক লণ্ঠনের আলোকদ্বারা গোশালা ও অন্তঃপুরের পূষ্করিণী এবং পরিবারেরদিগের বাসস্থান প্রভৃতি দেখাইলেন অপরঞ্চ তাঁহারা গৃহে গমনোদ্যত হওন সময়ে আতর গোলাব পুষ্পের তোররা এক খুঞা ভরিয়া বিবি সাহেবের সম্মুখে রাখিলেন সাহেবেরা বাবুর সন্তোষ হেতুক তাহা গ্রহণপূর্ব্বক মহা আহলাদিত হইয়া স্বস্থানে প্রস্থান করিলেন
*
হোটেলের দরজার পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে জিলা ছাপড়া গাঁও নওগড় থেকে ঠেলাওয়ালা চাচাতো ভাই বংশীলালের সঙ্গে রোটি রুজির ধান্ধায় কলকাত্তায় আসা ফতুয়া আর ধোতি পরা ভগলু চারদিকে বিজলিবাতির বাহার রঙবেরঙের হাওয়াই গাড়ি আর গাড়ি থেকে নামা সাহেবলোগ ও সঙ্গের তাজ্জব পোষাকপরা বিবিলোগদের দেখে একদম বুরবাক বনে গেল তার মালুম হোল হাঁ কলকাত্তা বহুৎ ভারি শহর
*
ক্রমে বিদ্রোহীরা শাসন হইলে, লার্ড কেনিং বিলাত গিয়া খ্রীষ্টপ্রাপ্তি হইলেন। এখানে গুজব উঠলো, সতু ঠাকুর সিবিল হলেন, কৃষ্ণবন্দো কাশী যাবার উদ্যোগ কল্লেন, বিহারী লাল প্রসিদ্ধ পাদরি হোলো। আমাদের মল্লেশ্বরপুরের দাদাঠাকুর হাড়গোড়ভাঙ্গা “দ” হইয়া পড়িলেন। তিনিও পক্ষির দলের এক জন প্রধান, সময়ে সকলি করে, মণি, ফণী হয়ে দংশে, অমৃত গরল ক্ষরে, এই এক বুলি ধরিয়া মধ্যে মধ্যে কালাবতি লাগাইতেন। দাদাঠাকুরের খিড়কির পারের কেষ্টা জোলা সভাপণ্ডিত হইয়া চূড়ামণি কবলাতে লাগলেন। বাছার পেটের ভিতরে সরস্বতী হাম্মা, হাম্মা করে, সংস্কৃতের মধ্যে গোটাকতক “বংশের গাণ্ডু মারিশ্যামিঃ ” গোচ বোল শিখিয়াছিলেন। এখনকার পণ্ডিতদের মধ্যে অনেকেরই বিদ্যা সেই রূপ। কলিকাতার অনেকানেক ভট্টাচার্য্যেরা রাতারাতি পণ্ডিত হইয়া চূড়ামণি, শিরোমণি, তর্কালঙ্কার, ন্যয়ালঙ্কার প্রভৃতি খেতাব বাহির করিয়া চুঁচড়ার সঙগের মত বেরোন। এও কলিকাতার নুকোচুরি।
*
সৃষ্টির বেদনাবিধৃত আনন্দ
তোমার হৃদয়কে স্পর্শ করছে, যে আনন্দ তোমার চিরপরিচিত, অথচ চিরঅপরিচিত — অপূর্ব, অনির্বচনীয় । এইতো সেই অমোঘ মুহূর্ত — কবিতার জন্মলগ্ন ।
কবি,
তোমার ঐ প্রেরণাময় আশ্চর্য অনুভব হৃদস্পন্দনে, ওষ্ঠাধরের চঞ্চল আলোড়নে কবিতার বাঙ্ময় রূপান্তর লাভ করুক:
সঘন চন্দ্রের
জঘন স্বপ্নের
রিক্ত উপাচার
বিকচ কঙ্কন
সিক্ত অঙ্গন
নক্ত উপহার
বিলাস চঞ্চল
তপ্ত শতদল
রক্ত উদ্ধার
স্নিগ্ধ তারকার
বিভাস শঙ্খের
*
তদনন্তর কক্ষে দিবালোকসম দীপ্তিসমুজ্জল আলোকচ্ছটা পরিবর্তন লাভ করতঃ কোমল তরল সবুজ গাঢ় সবুজ নীল ফিকে নীল বেগুনি আদি বর্ণের সমবায়ঘটিত এক অবর্ণনীয় আলোকপ্রবাহ তরঙ্গায়িত চতুর্দিকে বহিতে লাগিল পরে দেবসভায় হাহা হূহূ হংস নন্দি চিত্ররথ বিশ্বাবসু গোমায়ু তুম্বুরু আদি গীতবাদিত্রকুশল দেবযোনি গন্ধর্বগণের তুল্য সঙ্গীতবিশারদবৃন্দ কক্ষের উপান্তভাগে অপেক্ষমান এতক্ষণে প্রথমে আনদ্ধযন্ত্রে বাদ্যোদ্যম আরম্ভ করিলে তচ্ছ্রবণে সহসা পুরুষকণ্ঠে কলরব ও নারীকণ্ঠে কাকলী লেটস্ ডানস্ ধ্বনি চতুস্পার্শ্বে পরিক্রমণ করতঃ বর্ণবিভূষিত চিত্র এবং কারুকর্মশোভিত দেয়ালগাত্রে প্রতিহত ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হইতে থাকিল ইতোমধ্যে আসবপ্রভাবে উদ্দীপিত পুরুষবৃন্দ ও মদালসা কামিনীসকল উৎসাহ তথা প্রমোদব্যঞ্জক কলধ্বনি সমুত্থিত করিয়া স্ব স্ব সঙ্গী বা সঙ্গিনী নির্বাচনান্তর কখনো পরস্পরের বাহুলগ্ন কখনোবা কটিলগ্ন কখনো কণ্ঠলগ্ন কখনোবা বক্ষলগ্ন কখনো উদরলগ্ন কখনো দেহলগ্ন কখনোবা বিচ্ছিন্ন হইয়া নানাবিধ প্রক্রিয়ায় বিচিত্র পদক্ষেপকেশৈলে দেহবল্লরীর বিবিধ বিক্ষেপে তথা বিভিন্ন রসব্যঞ্জক ভঙ্গিমায় নৃত্য করিতে লাগিলেন তৎপরে সঙ্গীতের তাল–লয়ের পরিবর্তনে নৃত্যের আঙ্গিক ও সাত্ত্বিক ভঙ্গিসকলের বারম্বারপরিশোধনপরিমার্জনপরিবর্তন পরিবর্ধনে দেহবিক্ষেপের বিচিত্রতা ঘটিতে থাকিল তন্মধ্যে বারে২ ক্ষণকালের বিরতিতে সঙ্গী বা সঙ্গিনী পালট করিয়া বা না করিয়া কখনো কথঞ্চিৎ পরিমাণে সুরাপান সহযোগে উদ্দীপনা বৃদ্ধি করতঃ নৃত্যলীলা অব্যাহত চলিতে লাগিল তন্মধ্যে নৃত্যরতা কি নহেন এমত মিস্ এবং মিসিসদিগের মনোলোভা দৃষ্টিপিঞ্জর সুগঠিত সুরম্য সুপুষ্ট সুডোল স্ত্রীজনোচিত বিভিন্ন অবয়বসমূহ অসম্পূর্ণ সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ স্বল্পাংশ অত্যল্পাংশ অনেকাংশ অধিকাংশ বিশেষ প্রকটতা লাভ করিয়া পুরুষদিগের নেত্ররাজিকে আহলাদিত করিতে লাগিল ফলতঃ কখনো২ কেহ২ মীনকেতনের কুসুমচাপের জ্যামুক্ত সম্মোহন উচাটন শোষণ তাপন স্তম্ভন ইত্যাকার পঞ্চবাণের সমন্বিত প্রভাব উপলব্ধি করিতে লাগিলেন তৎসহ অনেকানেক রমণীগণও কোন২ পুরুষের অবিরত শ্রাবণধারার সদৃশ অনর্গলপ্রবাহে নিঃস্রাবিত মধুনিষ্যন্দী বাক্যসকলের শ্রবণে কিংবা কাহারো২ পৌরুষের যথোপযুক্ত নির্দেশক অবয়বনিচয় ভাবভঙ্গ্যাদির অবলোকনে কিংবা কাহারো২ ধনগৌরব পদগৌরব বংশগৌরব প্রতিপত্তি প্রভৃতির অবগতিতে কন্দর্পের অপ্রতিরোধ্য প্রভাব উপলব্ধি করিয়া তদনুরূপ হাবভাব বিলাসাদি প্রদর্শন করিতে লাগিলেন এদিকে নৃত্য অব্যাহত চলিতেছে মধ্যে ক্ষণকাল দুই একবার মুহূর্তের জন্য বুঝিবা নৃত্যরত নারীপুরুষদিগের ঘনিষ্ঠতাসঞ্জাত সঞ্চারীভাবসকলকে ন্যূনাধিক স্বাধীনতা দিবার মানসে আলোক নিভাইয়া দিলে হর্ষের যে কলকলনিনাদিত প্লাবন বাহিত হইল তাহা আমি বর্ণিবারে অক্ষম বস্তুতঃ নৃত্যলীলা ক্রমে২ এমত গতি উৎসাহ তথা বিলাসাদিদ্বারা সমন্বিত হইলেক যে বুঝিবা নৃত্যের অধিষ্ঠাতা দেবতা নটরাজ দেবাদিদেব মহেশ্বর তাঁহার কৈলাশস্থ অধিষ্ঠানে অচঞ্চল থাকিতে পারিলেন না পরন্তু অনুগত শিষ্য তণ্ডুকে তথায় অচাক্ষুষ অংশ গ্রহণ করত সমবেত পুরুষপুঙ্গব এবং যোষিৎবৃন্দকে সবিশেষ অনুপ্রাণিত উদ্বুদ্ধ উত্তেজিত উদ্দিপীত ও উৎসাহিত করিবারে প্রেরণ করিলেন।।
*
রাজ্যের জুআচোর হপ্তকলুমে খুস্টআঁখুরে জালখোতে বর্ব্বলে আড্ডা গেড়েছে
হেটোরাঁড়ে চারদিক গিজগিজ কচ্চে
*
*
নয়াদিল্লী, ২৬ এপ্রিল — সারা দেশে কর্মসংস্থান কেন্দ্রে নাম লিখেয়েছেন, এমন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৪১.২৩ লক্ষ এবং ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৩৯.০২ লক্ষ । এক বছরে দেশের শিক্ষিত বেকার ৫.৭ শতাংশ বেড়েছে ।
আনন্দবাজার পত্রিকা ২৭ এপ্রিল….
*
অধঃপাতে যা গোল্লায় যা চুলায় যা মারতো বাঁ পাতে লাথি মার ঝাঁটা মার জুতা তাঁরা যে বাঙ্গালীর ছেলে ইটি স্বীকার করতে লজ্জিত বেওয়ারিস বাঙ্গালা ভাষাতেও অনেকে যা মনে যায় তাই কচ্চেন সহরের স্থানে স্থানে এক একটা বড় গাঁজার আডডা রেতে মশা দিনে মাছি স্বশক্ত্যনুসারে ক্রিয়াতে ঘটাদি কার্যস্বরূপের প্রকাশাদি করে তাহাতে ঐ ঘটাদি কার্যের কারণাদি ছলনা ছেনালি ছেলেমি ছাপান ছেমো ছেঁচরামি…
*
ষ্টাফ রিপোর্টার:মশা মারার তেল থেকে বেবিফুড সব কিছুতেই ভেজাল । সারা কলকাতা জুড়ে ভেজালের কারবার ।
আনন্দবাজার পত্রিকা ২৭ এপ্রিল…
*
এদিকে হোটেলের মুখে ফুটপাতে ষথারীতি এক দঙ্গল ভিখিরি । দুর্গন্ধময় শতচ্ছিন্ন বাস, অর্ধনগ্ন হাড় জিরজিরে শরীর, সব মিলিয়ে বীভৎস একটা ঝাঁক, কানা খোঁড়া ঘেয়ো নোংরা বাচ্চা ধাড়ি ছেলে মেয়ে মাগি মদ্দ । গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাত ডিঙিয়ে হোটেলের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর আগেই ওরা প্রায় চারদিক থেকে অভ্যাগতদের আগলে ছেঁকে ধরছে । ইতিমধ্যে দুটি ভিখিরি মেয়েছেলের তারস্বরে বচসা বেশ জমে উঠেছে । সাহেবের কাছে আমিই তো আগে ভিক্ষে চাইল্যেম, তুই মাগী, তুই আবার চাইতি গেলিরে কেন ? সাহেব তাই নাগে গটমট করত্যে করত্যে ঢুক্যে গেল । সাহেব কি তোর নাঙ না ভাতার যে তার কাছে ভিখ চাইতি পারব নি । কি বললি খানকি মাগি ! গু–খাগির বিটি, খানকি আমি ? গুদ–মারানি খানকির বিটি, খানকি তুই, তোর চোদ্দ গুষ্টি । তোর… অবশেষে হোটেলের দুই উর্দিপরা দারোয়ান আর এক কনেস্টেবল তেড়ে এসে দু–একটা লাঠির ঘা লাগাতে দঙ্গলটা কিছুটা সরে আবার এগিয়ে আসার সুযোগের অপেক্ষায় রইল ।
*
ষ্টাফ রিপোর্টার: আট পার্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খাদ্যের দাবিতে আগামী ১৪ মে ‘ভুখা মিছিল’ বের করা হবে কলকাতা এবং জেলা ও মহকুমাগুলির সদরে ।
আনন্দবাজার পত্রিকা ২৯ এপ্রিল…
*
.
বাঈনাচের মজলিস চূড়োন্ত সাজানো হয়েছে , গোপাল মল্লিকের ছেলের ও রাজা বেজেন্দরের কুকুরের বিয়ের মজলিস এর কাছে কোথায় লাগে ! সহরের নন্নী , নুন্নী , মুন্নী , খন্নী ও টন্নী প্রভৃতি ডিগ্রী মেডেল ও সার্টিফিকেটওয়ালা বড় বড় বাঈজীরা ও গোলাপ ,শাম, বিধু , খুদু , মণি ও চণি প্রভৃতি খেমটাওয়ালীরা, নিজ নিজ তোবড়াতুবড়ি সঙ্গে করে আসতে লাগলেন । প্যালানাথবাবু সকলকে মা–গোঁসাইয়ের মত সমাদরে রিসিভ কচ্চেন , তাঁদেরও গরবে মাটিতে পা পড়চে না ।
*
শব্দ আর অর্থের আশ্রয়ে থেকেও কবিতার রহস্য বাগর্থের অতীত । সন্ধানহীন, মানচিত্রহীন চিরসংগোপনে
তার অধিষ্ঠান । সেই গহন থেকে উৎসারিত হয়
লোকোত্তর উচ্চারণ
রকেট জাগুয়ায় রেডিও পিস্টন
ফ্রাংকো চকোলেট মস্কো ক্যাণ্সার
টেনিস কিসমিস দ্যগোল লিস্টন
বোয়িং কোকাকোলা সুপার ওয়েটার
রোবট হংকং এটম নিক্সন
ইয়েন কসমিক বেকেট ডেঞ্জার
লুনার লন্ডন লুনার লন্ডন
*
ড্যাম ন্যাশটী বেঙ্গলী কাষ্ট সব নষ্ট কোল্লে কেহ কহে কালিয়া কাবাব কেহ বলে লাল সরাব তিনি ইংরাজী লেখাপড়া জানতেন না কিন্তু পাঁচ ইয়ারের সঙ্গে মিলে ইংরজী ধরণে চলতেন গরিবের ছেলের নেশা ছুটে যেতে পেটের জ্বালায় আর মশার কামড়ে যে কি কোত্তো প্রজাপলিনী অশেষ গুণধারিণী শ্রীশ্রীমতী ইংলণ্ডেশ্বরীর এদেশীয় মানবদিগের প্রতি মাতৃবৎ স্নেহ প্রাচীন লোচ্চা বাবুরা যাঁহারা সেস্থানে ছিলেন সকলেই কহিলেন ওহে তোতা বুদ্ধিমান কিমর্থে ভাবিত বসিয়া আছ
*
নিজস্ব সংবাদদাতা: হাওড়া জেলের মধ্যে শনিবার সকালে জেলের ওয়াডারদের গুলিতে পাঁচজন বিচারাধীন বন্ধী ঘটনাস্থলেই মারা যান। আরও একজন বন্দীর মাথায় গুলি লাগে ।
আনন্দবাজার পত্রিকা ৪ মে…
*
তথায় আমোদের বিচিত্র কলকোলাহল ও গীতবাদিত্রধ্বনির আতিশয্যের মধ্যেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে সম্যক বিবেচনা আলোচনা পর্যালোচনা সমালোচনা বিচার বিশ্লেষণের মানসে কেবলমাত্র আমোদআহ্লাদে কালাতিপাত করিবারে অক্ষম আপামর জনসমাজের সেবায় উৎসর্গীকৃত প্রাণ তথা তাহারদিগের দুঃখদারিদ্র্যজনিত ক্লেশ লাঘব করিবার দুশ্চিন্তায় বিগতনিদ্র এক মন্ত্রীমহোদয়, একান্ত সদাশয় বংশগৌরব সম্পদগৌরব বিদ্যাগৌরব ইত্যাদির কারণে নগরীস্থ অভিজাতসমাজে বিশেষ খ্যাতনামা লোকসমাদৃত তদুপরি মহানগরীর দ্বিপঞ্চাশৎটি গণহিতকর প্রতিষ্ঠানের মাননীয় সভাপতি মিস্টার ডাটা নামধেয় মহাপ্রাণ এবং বহুমানিতা পরমবেশা অক্ষয়যৌবনা মিসিস মেটা নাম্নী মহানগরীর জম্বুকসঙ্ঘের বিশ্রুতকীর্তি সভানেত্রী সমাজসেবিকা শীতাতাপনিয়ন্ত্রিত উপর্যুক্ত কক্ষের মৃদু আলোকিত উপান্তে বিরলে ফেননিভ ডানপিলোবিনির্মিত আসনে ঘনিষ্ঠভাবে উপবেশন করতঃ স্বদেশীয়দিগের কারণে যার পর নাই চিন্তান্বিত ইতোমধ্যে অন দ্য রক সপ্তমপাত্র স্কটল্যাণ্ডাগত হুইস্কি নামক উদ্দীপক সুরাসার পান করিয়াও অতৃপ্ততৃষ্ণ তথাপি নির্ভেজাল দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত তথা অনন্যমনা হইয়া দুর্ভাগ্য এবং দারিদ্র্যনিপীড়িত স্বদেশবাসিদিগের সমুন্নতির উদ্যোগ উপায় উপকরণ পদ্ধতি প্রতিবন্ধক সম্ভাবনা দুর্ভাবনা কর্তব্য অকর্তব্য অগ্রগতি অধোগতি অগতি প্রগতি প্রকল্পনা আত্মসমালোচনা সমীক্ষা পথনির্ধারণাদি বিষয়ে সম্যক নিরীক্ষণে নিমগ্ন হইলে তথায় তাঁহারদিগের ইত্যকার গঠনমূলক তত্ত্বানুসন্ধান চলাকালীন অবস্থায় অভূতপূর্ব মাওপ্রস্থানের ভূতপূর্ব সাম্যবাদী বিপ্লবে বিশ্বাসী তথা সবিশেষজ্ঞ এবং বর্তমানে অতিশয় খ্যাত এক মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তরঔপনিবেশিক তত্ত্ব এবং নিম্নবর্গীয় পর্যেষণার শ্রুতকীর্তি অধ্যাপক মহানগরীর বুদ্ধিজীবি আখ্যাত বিদ্দজ্জনমণ্ডলীতে সবিশেষ শ্রদ্ধার সমুচ্চাসনে আরূঢ় খ্যাতনামা প্রফেসর সিরকার বারম্বার আপনকার তাম্রকূটপূর্ণ পাইপ হইতে ধূম্রসেবন তথা ধূম্রজাল উদগীরণ করিতে২ তত্র সমাগত হইয়া আলোচ্য বিষয়সমূহের রূপ স্বরূপ সমস্যা জটিলতা আবর্তন সংবর্তন বিবর্তন ব্যবচ্ছেদ সংশ্লেষণ বিশ্লেষণ বিনির্মাণ পরিসংখ্যান কার্যকারণ সমাধানাদি বিষয়ে শ্বেতাঙ্গ পণ্ডিতদিগের বিভিন্ন প্রস্থানের বিবিধ মতবাদ সবিস্তারে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচারসহ সংজ্ঞাপিত ও পরিজ্ঞাত করিয়া নব্য–নৈয়ায়িক পন্থায় তাহা খণ্ডণ করতঃ ন্যায়–বৈশেষিক প্রস্থানের সহিত রূপান্তরমূলক সঞ্জননী পদ্ধতির প্রয়োজনীয় সংকরীকরণের দ্বারা সমস্যার তাবৎ জটিলতা ভেদ করিয়া শ্রোতৃবৃন্দকে আলোকতরঙ্গের চুনামিতে ভাসাইয়া দিয়া বিমুগ্ধ চমৎকৃত এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় করিয়া দিলেন ।।
*
শ্রাদ্ধঘাটের লাগোয়া পুলের তলায় কলকাতা পুলিসের একখানি কালো ভ্যান এসে দাঁড়ালো । নাকে কাপড় বাঁধা দস্তানাপরা জনকয়েক মুদ্দাফরাস স্ট্রেচার নিয়ে গাড়ি থেকে নাবলে । বহুকাল ধরে ক্রমশ অর্ধাহার স্বল্পাহার অত্যল্পাহার নামমাত্রাহারে দিন গুজরান করে শেষ আব্দি পাপতাপহারিণী গঙ্গার তীরে এসে দিন কয়েকের অনাহারে চলৎশক্তিহীন হয়ে একটা নামগোত্র খোয়ানো লোক এখানে পেট ফুলে টেসে গিয়েচে । সরকার বাহাদুরের খাতায় অবশ্যি লোকটির অপুষ্টিজনিত দুরারোগ্য রোগে মৃত্যুর উল্লেখ করা হবে। যাই হোক ক্রমে মড়াটা পচে গলে ঢোল হয়ে মহল্লা জুড়ে গন্ধ ছড়াতে শুরু কল্লে । লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে শেষ অব্দি থানায় খবর দিলে । বিভিন্ন ধান্ধায় জটিল জীবনসংগ্রামে ব্যতিব্যস্ত পুলিশ এই উটকো ঝঞ্ঝাটে যৎপরোনস্তি উত্যক্ত হয়ে নিরুপায়ভাবে লাশ সরানোর ব্যবস্থা নিলে। লাশ তোলার সময় ‘ব্যাপারটা কি’ ‘চোখের মাথা খেয়েচ — গঙ্গাজল নিয়ে মেয়েমানুষ যাচ্চে দেখতে পাচ্চো না’ ‘কি হয়েছে দাদা’ ‘কি হোল দাদু’ ‘হারামজাদা পুরুতটা আবার গেল কোথায়’ ‘শালা পচে ঢোল হয়ে গেচে’ ‘পটলা মড়া ছুঁলে আবার গঙ্গায় নাইতে হবে’ ‘নিজের কাজে যান না, ভিড় করচেন কেন’ ‘ও পাঁচু তুই আবার গেলি কোথায় আচ্ছা বজ্জাত ছেলে তো’ ইত্যাদি আন্দোলনের মধ্যে একটু একটু এগিয়ে নাকে ধুতির খুঁট গামছা কি রুমাল চাপা দিয়ে কৌতূহলী জনতার চোখে পড়ল লাশটির হাঁ–করা মুখের মধ্যে গোটা পঞ্চাশেক মাছি ঢুকে পড়েচে । আর কয়েকশ কাঠপিঁপড়ে ধুলোকাদামাখা ঐ কালো শরীরটাকে কামড়ে ধরেচে ।
*
স্থান অতি অপরিষ্কার ও ইল্লৎ হয় ও তথাকার বিটকাল ক্লেদরাশিঘটিত বাতাসে লোকেরা পীড়া পায় লালবাজারের নূতন গির্জাঘরের উপরে যে মুরগ আছে সেই কেবল ওলাউঠার কারণ কালীঘাটে কি বাজারে কি কালীর বাড়ী কি নকুলেশ্বরের তলা কি বাসা সকল জায়গাতেই কাঙ্গালি ঘুরে২ বেড়াচ্ছে মোং কলিকাতায় এমত এমত প্রকার নূতন চরক হইয়াছিল যে তাহা শুনিলেই শিষ্ট লোকেরা কর্ণে হাত দেয়
*
তিল তিল কল্পনায় কবি
গড়ে তোলেন তাঁর একান্ত আপন
তিলোত্তমা পৃথিবী , সেখানে স্বপ্নের দিগন্ত–সীমায় বাস্তবের যা কিছু ক্লেদ পরিশ্রুত হয়ে মিলিয়ে যায় ।
রূপ থেকে অরূপ,
সীমা থেকে অসীমের নির্দেশহীন পথে
কবির যাত্রা ।
সেই যাত্রাপথে সৃষ্টির আনন্দময় বেদনাই কবির একমাত্র প্রাপ্য । এবং এই উদ্বোধনে অব্যাহত কবির সৃজনকর্ম :
ঝিলমিল লাল নীল
লাল নীল মঞ্জীল
মঞ্জুল অঙ্গন
তিল তিল চন্দন
ঝলমল উচ্ছ্বাস
স্বপ্নের উদ্ভাস
হৃদয়ের মৌবন
কল্লোল রঙ্গন
ঝলমল মঞ্জীল
ঝিলমিল লাল নীল
*
ব্রজের নন্দ ঘোষের স্বজাতি কলিকাতার হরিভক্ত গোয়ালা মহাপ্রভুরা কসাইকে যখন নবপ্রসূত গোবৎস বিক্রয় করেন, কসাই যখন শিশু বৎসের গলায় দড়ি দিয়া হিঁচড়াইয়া লইয়া যায় তখন সেই দুখের বাছুরটি নিদারুণ কাতরকণ্ঠে যেরূপ মা মা বলিয়া ডাকিতে থাকে, সেইরূপ কাতর স্বরে আমিও মা দুর্গাকে ডাকিতে লাগিলাম
*
ঠাকুর, এখানি আছি তোমার ঠাঁই, যেমত পুত্র পিতার সাক্ষাতে, তোমার রাজত্বের অংশী আমারে করিও ।
এই জানন, মানন, বুঝন, সকল তোমার উপায়
আশা কর স্বর্গের যাইবার প্রভুর ক্পায় ।
স্বর্গেতে ভোগাভোগ তোমারে দিবেন প্রভু
তাহানে দয়া কর যদি । আমেন যেশু ।